ভিসা সহজ! পর্যটকদের স্বাগতম জানাচ্ছে এক সময়ের ‘নিষিদ্ধ’ দেশ!

শিরোনাম: পর্যটকদের জন্য দুয়ার খুলছে তুর্কমেনিস্তান? এক সময়ের বিচ্ছিন্ন এই দেশটির নতুন ভিসা নীতি

মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান, দীর্ঘদিন ধরে বহির্বিশ্ব থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি কার্যত এক প্রকারের ‘রুদ্ধদ্বার’ নীতি অনুসরণ করে আসছিল।

তবে সম্প্রতি ভিসা নীতি সহজ করার যে ঘোষণা এসেছে, তাতে পর্যটকদের জন্য দেশটির দুয়ার খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল মাসে ভিসা সংক্রান্ত নতুন নিয়ম-কানুন ঘোষণার পর ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর কোরিয়া এবং ইরিত্রিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তুর্কমেনিস্তানকেও বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হতো।

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশটি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। ফলে বাইরের মানুষের কাছে এর প্রবেশাধিকার ছিল সীমিত।

পর্যটকদের জন্য ভিসা পাওয়া ছিল বেশ কঠিন একটি প্রক্রিয়া। এর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি ‘লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন’ (Letter of Introduction – LOI) সংগ্রহ করতে হতো, যা পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেত।

এরপর সরকার যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতো, আপনি দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা।

তবে, শোনা যাচ্ছে, সরকার এখন ভ্রমণকারীদের জন্য সবকিছু সহজ করতে চাইছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভ্রমণ সংস্থা ‘লুপাইন ট্রাভেল’-এর পরিচালক ডিলান লুপাইন বলেন, “নতুন ভিসা নিয়ম এখনো কার্যকর হয়নি এবং কবে নাগাদ হবে, সে বিষয়েও কোনো খবর নেই।

তবে, নতুন নিয়ম চালু হলে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে বলে আমরা মনে করি।

যদি এই নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে এবং দ্রুত ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। পর্যটকদের ‘লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন’-এর প্রয়োজন হবে না।

তবে, এখনো একজন ‘স্পন্সর’-এর প্রয়োজন হবে, যার মানে হলো কোনো সরকারি ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে ভ্রমণ করা।

তুর্কমেনিস্তানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘দারভাজা গ্যাস ক্রেটার’, যা ‘নরকের দরজা’ নামেও পরিচিত। রাজধানী শহর আশখাবাদ থেকে প্রায় চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে কারাকুম মরুভূমিতে এর অবস্থান।

সোভিয়েত আমলে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের সময় এই বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। পর্যটকরা এখানে এসে রাতের বেলা তাঁবুতে রাত্রি যাপন করেন এবং আগুনের শিখা উপভোগ করেন।

তবে, শোনা যাচ্ছে, গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এখানকার শিখা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের জন্য অন্য অনেক কিছুই রয়েছে।

প্রাচীন সিল্ক রুটের শহরগুলোতে ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনারগুলো এখনো বিদ্যমান। রাজধানী আশখাবাদ-এ রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন, যা পর্যটকদের কাছে অন্যরকম আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

এখানকার মার্বেল পাথরের তৈরি ভবনগুলো এবং সোনার মূর্তিগুলো বেশ জনপ্রিয়।

আশখাবাদে কেনাকাটার জন্য রয়েছে রাশিয়ান বাজার, যেখানে ক্যাভিয়ারসহ নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে পার্সিয়ান এবং মধ্য এশীয় সংস্কৃতির খাবারের স্বাদ উপভোগ করা যায়।

রাতের জীবন খুব একটা জমজমাট না হলেও, ‘ক্লেভার’স আইরিশ পাব’ অথবা ‘ফ্লোরিডা ব্রিটিশ পাব’-এ বসে ঠান্ডা বিয়ারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।

একসময় এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য পথের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এই দেশ। এখানে রয়েছে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, যেমন – আশখাবাদের কাছে পার্থিয়ান দুর্গ এবং পূর্ব তুর্কমেনিস্তানের মের্ভের ধ্বংসাবশেষ।

এছাড়াও কুনিয়া-উরগেঞ্চের মসজিদ, সমাধি এবং মিনারগুলোও বেশ আকর্ষণীয়।

নরওয়েজিয়ান লেখক এবং নৃতত্ত্ববিদ এরিকা ফ্যাটল্যান্ড, যিনি মধ্য এশিয়া এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে অনেক বই লিখেছেন, তিনি বলেন, “তুর্কমেনিস্তানের মানুষ খুবই friendly এবং অতিথিপরায়ণ।

তবে, দেশটির জাতীয় পানীয় ‘ফার্মেন্টেড উটের দুধ’ (fermented camel milk) -এর স্বাদ সবার পছন্দ নাও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকার পর্যটন খাতের ওপর জোর দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানে পর্যটন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্ভবত, তুর্কমেনিস্তানও একই ধরনের সাফল্যের প্রত্যাশা করছে।

অতীতে, সোভিয়েত আমলে Intourist নামক একটি সংস্থা পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করত। তবে, সে সময় পর্যটকদের কেবল ভালো দিকগুলো দেখানো হতো।

বর্তমানে, তুর্কমেনিস্তানের সরকার ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে চাইছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *