ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) আবারো কিছু দেশে টারটল ডোভ (এক প্রকারের ঘুঘু পাখি) শিকারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে। বন্যজীবন সংরক্ষণে সক্রিয় সংস্থাগুলোর উদ্বেগ সত্ত্বেও, স্পেন, ফ্রান্স এবং ইতালিতে প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার পাখির শিকারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি পাখিগুলির জীবনযাত্রার উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে পরিবেশ প্রেমীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
২০২১ সালে এই পাখি শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ পশ্চিম ইউরোপে টারটল ডোভের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। পাখিপ্রেমীদের মতে, শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে টারটল ডোভ-এর সংখ্যা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা তাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
তবে, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্তের কারণে অনেক পরিবেশবিদ মনে করছেন, এতে পাখির সংখ্যা হ্রাসের সম্ভবনা রয়েছে।
বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র নীতি কর্মকর্তা বারবারা হেরেরো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “টারটল ডোভ তার ভূমিকা পালন করেছে। একা থাকতে দিলে তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছিল।
কিন্তু সরকারগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল আইন প্রয়োগ এবং আবাসস্থল রক্ষার পরিবর্তে, তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে। আমরা জানি, এই পথে চললে কী হয় – আবারও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে হবে।”
অন্যদিকে, শিকারিরা মনে করেন, টারটল ডোভের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন শিকারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
ইতালীয় শিকার ফেডারেশনের প্রধান মাসিমো বুকোনির মতে, ভেনেতো অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে টারটল ডোভ শিকারের মাধ্যমে শিকারের মরসুম শুরু হয়। তিনি একে “ফুটবল মৌসুমের প্রথম দিনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন” হিসেবে বর্ণনা করেন।
স্পেনেও একই ধরনের যুক্তি দেওয়া হয়েছে, যেখানে শিকারের সঙ্গে সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
স্পেনীয় শিকার ফেডারেশনের প্রতিনিধি আলেহান্দ্রো মার্তিনেজ জানান, শিকারের কারণে স্পেনে প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ইউরোর ব্যবসা হয় এবং ২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
ইউরোপীয় কমিশনের মতে, টারটল ডোভ শিকার পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ হয়েছে। তাদের দাবি, পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদের বাঁচার হার বেড়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, শিকারের অনুমতি দেওয়ার ফলে টারটল ডোভের মোট জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ শিকার করা যাবে। তবে, এস্তোনিয়া এবং বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
টারটল ডোভ-এর মতো পরিযায়ী পাখির জীবনযাত্রা এবং তাদের সংরক্ষণের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, আমাদের দেশেও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিয়মিতভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিভ্রমণ করে। সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এমন সিদ্ধান্তগুলি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: The Guardian