যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিশ্বে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এক বীর সেনানির গল্প।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে একসময় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি ছিল চরম বৈষম্য। তাদের অযোগ্য মনে করা হতো, এমনকি বিমান চালানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনেরও উপযুক্ত ভাবা হতো না। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন ‘তাসকেগি এয়ারম্যান’-রা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে কোরিয়ান যুদ্ধ পর্যন্ত, তারা প্রমাণ করেছেন, অদম্য মনোবল থাকলে যে কোনো বাধা জয় করা সম্ভব। তাদেরই একজন, কর্নেল জেমস এইচ. হার্ভে থ্রি। বয়স একশো এক পেরিয়ে গেলেও, আজও তিনি অবিচল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
কর্নেল হার্ভে ছিলেন ‘তাসকেগি এয়ারম্যান’-এর ৩৩২তম ফাইটার গ্রুপের সদস্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তারা উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপে ৪০০টিরও বেশি শত্রু বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করেছিলেন এবং একটি জার্মান ডেস্ট্রয়ার ডুবিয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৪১ সালে আলাবামার টাসকেগি ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠিত হয় ৯৯তম পার্স্যুট স্কোয়াড্রন, যা ছিল এই দুঃসাহসিক বিমান সেনাদের ভিত্তি। তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৯৯২ জন পাইলটের মধ্যে ৬৪ জন নিহত হন এবং ৩২ জন যুদ্ধবন্দী হয়েছিলেন।
যুদ্ধ শেষে যখন বিমান বাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন ‘তাসকেগি এয়ারম্যান’-দের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতে অনেক সময় লেগেছিল। এমনকি, তাদের সাফল্যের প্রমাণস্বরূপ ১৯৪৯ সালের গানারি মিটে (Gunnery Meet) প্রথম স্থান অধিকার করার ঘটনাটিও প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তবে কর্নেল হার্ভের মতে, তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন, কারণ তাদের গায়ের রং কালো ছিল।
কোরিয়ান যুদ্ধে কর্নেল হার্ভে এফ-৮০ শুটিং স্টার জেট ফাইটার বিমান চালিয়ে ১২৬টি মিশনে অংশ নিয়েছিলেন এবং বীরত্বের জন্য সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০২৩ সালে তাকে কর্নেল পদে সম্মানিত করা হয়।
তবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই এখনো চলছে। সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, ফেডারেল ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি এবং ইনক্লুশন প্রোগ্রামগুলো বাতিল করার সময়, বিমান বাহিনী থেকে ‘তাসকেগি এয়ারম্যান’-দের নিয়ে তৈরি ভিডিওগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
যদিও পরে তীব্র সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
কর্নেল হার্ভে মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কারকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তিনি স্পষ্টভাবে ট্রাম্পকে একজন বর্ণবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তার এই মন্তব্যের জন্য কোনো প্রকার ভয়ের শিকার নন।
তিনি বলেন, “তারা আমাকে হয়তো মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু আমার সত্য বলার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
কর্নেল হার্ভের মতো মুক্তিযোদ্ধারা প্রমাণ করেছেন, মানুষের আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস