ঐতিহাসিক মুহূর্ত! প্রথমবারের মতো এটিএম পেল টুভালু!

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র, টুভালু, অবশেষে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলো। দেশটির প্রধান দ্বীপ ফুনাফুতিতে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংক অফ টুভালুর সদর দফতরে সম্প্রতি তাদের প্রথম এটিএম (ATM) উদ্বোধন করা হয়েছে।

এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি টুভালুর প্রায় ১২,০০০ মানুষের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যেখানে আগে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিংয়ের কোনো সুযোগ ছিল না।

অনুষ্ঠানে টুভালুর প্রধানমন্ত্রী ফিলেটি টিও, গভর্নর জেনারেল, স্থানীয় প্রধান এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এটিএম উদ্বোধনের মাধ্যমে আর্থিক আধুনিকীকরণের দিকে দ্বীপরাষ্ট্রটির দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যাত্রা শুরু হলো। এতদিন পর্যন্ত টুভালুর সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম নগদ টাকার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

বেতন তোলার জন্য কর্মীদের ব্যাংকের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, যা প্রায়ই অনেক সময়সাপেক্ষ ছিল। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, বিশেষ করে দুপুর ২টার পরে, অনেক সময়ই তাদের ভোগান্তি হতো।

মুদি দোকান, হোটেল এবং অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও লেনদেন ছিল মূলত নগদ নির্ভর।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তিনি বলেন, “আজকের দিনটি শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

কারণ, এর মাধ্যমে ব্যাংকটি শুধু সেবার দিক থেকেই নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও একটি নতুন যুগে প্রবেশ করলো।”

২০২১ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মোট খরচ ছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (১ অস্ট্রেলীয় ডলার = ৭২ টাকা হিসেবে প্রায় ২১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা)।

ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার সিওস পেনিটালা টিও জানান, “আমরা এতদিন পর্যন্ত একটি এনালগ (analogue) জগতে ছিলাম, এটা আমাদের জন্য একটা স্বপ্ন ছিল।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই মেশিনগুলো আনা সহজ ছিল না। তবে সরকারের সহযোগিতা এবং দৃঢ় সংকল্পের ফলে আমরা আমাদের জনগণের জন্য এই সেবা চালু করতে পেরেছি।”

জানা গেছে, প্রথমে পরামর্শকের সঙ্গে কাজ করার পর, ব্যাংকটি ফিজিভিত্তিক প্যাসিফিক টেকনোলজিস লিমিটেডকে এই সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে।

বর্তমানে ফুনাফুতি বিমানবন্দরের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামগুলোতেও এটিএম পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে পাঁচটি এটিএম স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩০টি পয়েন্ট অফ সেল (POS) টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে, এই মেশিনগুলোতে শুধুমাত্র প্রি-পেইড কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছে।

খুব শীঘ্রই ডেবিট কার্ড চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে ভিসা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা দিয়ে ভ্রমণ এবং অনলাইন কেনাকাটাও করা যাবে।

প্রায় ৬,০০০ ব্যাংকিং গ্রাহক, যাদের অনেকের একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের জন্য ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং পরিষেবা চালু হওয়ায় ব্যাংকের ভিড় কমবে, নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে এবং প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতেও আর্থিক সেবার সুযোগ বাড়বে।

আপাতত, গ্রাহকদের জন্য এই পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে ফি নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, তবে এখনকার মূল লক্ষ্য হলো সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *