টাইপ ১ ডায়াবেটিসে বাড়ছে নতুন ওষুধের ব্যবহার, বাড়ছে ঝুঁকি?

ডায়াবেটিস (Diabetes) একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা যা বর্তমানে সারা বিশ্বে উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে, আমাদের দেশেও এই রোগ দ্রুত বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের জটিলতাগুলো কমানো সম্ভব। সম্প্রতি, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের (Type 1 Diabetes) চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু নতুন ওষুধের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে, যা অনেকের জন্য উপকারী হতে পারে আবার কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণও বটে।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ইনসুলিন (Insulin) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না।

ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন যা রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) রোগীদের ক্ষেত্রে, শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।

আলোচিত ওষুধগুলো হলো GLP-1 রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট (GLP-1 Receptor Agonists) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, যেমন – ওজেম্পিক (Ozempic), ওভেগি (Wegovy) এবং জাপবাউন্ড (Zepbound)। মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধগুলো তৈরি করা হলেও, ওজন কমানো এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এগুলোর কার্যকারিতা পাওয়া গেছে।

তবে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলোর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এই রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালাতে কিছুটা দ্বিধা বোধ করে, কারণ ইনসুলিনের সাথে এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া/Hypoglycemia) ঝুঁকি থাকে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা এই গবেষণায় ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে সংগৃহীত ২ লক্ষাধিক রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী, এই সময়ে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার ১৮% থেকে বেড়ে ২৬% হয়েছে, এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার ৩০% থেকে বেড়ে ৩৮% হয়েছে। স্থূলতা (Obesity) বৃদ্ধির সাথে সাথে GLP-1 ওষুধ ব্যবহারের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগী এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভালো ফল পেয়েছেন, বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন। এই ওষুধগুলো তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করেছে।

তবে, এই ফলাফলগুলো এখনো সীমিত এবং আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। যেমন – ওষুধের সঠিক ডোজ নির্ধারণ করা, কারণ ইনসুলিনের সাথে এর মিথস্ক্রিয়া হতে পারে।

এছাড়া, যাদের ওজন স্বাভাবিক, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ, এমন রোগীদের মধ্যে এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য GLP-1 ওষুধ কতটা নিরাপদ ও কার্যকর, তা জানার জন্য আরও গবেষণা চলছে। এই গবেষণাগুলোতে একদিকে যেমন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি কিছু উদ্বেগের দিকও সামনে আসছে।

তাই, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবন যাপন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *