আলোচনা: পুলিশ হেফাজতে টাইর নিকোলসের মর্মান্তিক পরিণতি!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস শহরে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, পুলিশের হাতে টায়ার নিকোলস নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রাক্তন তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্প্রতি রাজ্যের আদালত দোষী সাব্যস্ত করেনি।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল এবং পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি ট্রাফিক স্টপ থেকে। পুলিশ জানায়, ২৯ বছর বয়সী টায়ার নিকোলসকে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর সন্দেহে থামানো হয়েছিল। যদিও পরে জানা যায় যে, কেন তাকে থামানো হয়েছিল, সেই কারণটি কর্তৃপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি।

ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা নিকোলসকে মারধর করছে এবং তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার তিন দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়।

এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে রাজ্য এবং ফেডারেল উভয় পর্যায়েই অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন, ডেসমন্ড মিলস জুনিয়র এবং এম্মিট মার্টিন, দোষ স্বীকার করে নেয় এবং অন্য তিনজন অফিসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়।

অভিযুক্ত অন্য তিনজন অফিসার হলেন টাডারিয়াস বিন, ডেমেট্রিয়াস হ্যালি এবং জাস্টিন স্মিথ। রাজ্যের আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে, তাঁদের এখনো ফেডারেল অভিযোগের কারণে কারাদণ্ডের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

টায়ার নিকোলসের মৃত্যুর পর, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। মেমফিস শহরের পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ ওঠে, কারণ সেখানকার বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন বিচার বিভাগ (Department of Justice) মেমফিস পুলিশ বিভাগের কার্যক্রমের ওপর একটি তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্তে উঠে আসে যে, মেমফিস পুলিশ বিভাগ কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।

এই মামলার কারণে মেমফিসের বিতর্কিত ‘স্করপিয়ন’ ইউনিটকে ভেঙে দেওয়া হয়। এই ইউনিটটি শহরের অপরাধ দমনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

টায়ার নিকোলসের পরিবারের সদস্যরা এখনো ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন। নিকোলসের মা তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে শহরের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন, যার পরিমাণ প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। এই মামলাটি সম্ভবত ২০২৬ সালের জুলাই মাসে আদালতে উঠবে।

বর্তমানে, অভিযুক্ত পাঁচজন অফিসারের মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন। মিলস এবং মার্টিনকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি কার্যক্রম এবং জাতিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *