যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত তিন পুলিশ সদস্যকে বেকসুর খালাস দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নিহত টাইর নিকোলসের পরিবারের ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এই ঘটনার পর পুলিশি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে।
২০২৩ সালের ৭ই জানুয়ারি, ২৯ বছর বয়সী টাইর নিকোলসকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে থামায় মেমফিস শহরের পুলিশ। ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে বেধড়ক মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তে জানা যায়, “মারধরের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।” এই ঘটনার জেরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে এটি ছিল অন্যতম বড় প্রতিবাদ। ঘটনার তদন্ত শেষে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়। এদের মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি রাজ্যের আদালতে তোলা হলে, বিচারকরা তাদের সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেন।
আদালতের এই রায়ের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশটির নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছেন, “টাইর নিকোলস এবং তার পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য। শুধুমাত্র আদালতের রায়ই যথেষ্ট নয়, পুলিশি সংস্কারের জন্য কংগ্রেসের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
সংগঠনগুলোর মতে, ট্রাফিক স্টপ কোনো মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। তাদের আরও অভিযোগ, “পুলিশের পোশাক সবসময় দায়মুক্তির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে না।”
এদিকে, নিহত টাইর নিকোলসের পরিবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি মামলা করেছে। তাদের আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প বলেছেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাই: আমাদের অবশ্যই এই অবিচার টিকিয়ে রাখা ব্যবস্থাগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
টাইর নিকোলসের মৃত্যুর পর মেমফিস পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে, কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, বেআইনিভাবে ট্রাফিক স্টপ করা এবং কৃষ্ণাঙ্গদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে।
যদিও, স্থানীয় সরকার পরে ট্রাফিক স্টপ সংক্রান্ত কিছু সংস্কার বাতিল করে দেয়। আইনজীবীরা বলছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্যামেরার সামনে ঘটনার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
তাদের মতে, “এই ধরনের রায় একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে কিছু মানুষের জীবন কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্বহীন।” যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের।
বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যে কিছু সংস্কার আনা হয়েছে, যেমন পুলিশের নজরদারি বাড়ানো, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে, ফেডারেল পর্যায়ে এখনো তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি।
টাইর নিকোলসের ঘটনা আবারও সেই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস