টাইরিয়ন: হুইলচেয়ারে নতুন জীবন, এক মাল্টিপু’র অদম্য লড়াই
কুকুরটির নাম টাইরিয়ন। গেম অফ থ্রোনস-এর বুদ্ধিদীপ্ত ও লড়াকু চরিত্রটির নামানুসারে রাখা এই মাল্টিপু যেন নামের প্রতি সুবিচার করেই চলেছে।
সাত বছর বয়সী এই কুকুরটি একদিকে যেমন তার অফুরন্ত প্রাণশক্তি, অন্যদিকে মিষ্টি মুখাবয়ব নিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে।
টাইরিয়ন এখন হুইলচেয়ারে করে দিব্যি জীবন যাপন করছে।
টাইরিয়নের জীবনটা সবসময় মসৃণ ছিল না।
তার ২৯ বছর বয়সী মালকিন ডাগমার গুডমান্ডসন, আট সপ্তাহ বয়স থেকে সবসময় তার পাশে ছিলেন।
স্বাস্থ্যবান টাইরিয়নের জীবনে সবকিছু বদলে যায় ২০২৪ সালের ২রা মার্চ।
সেদিন খেলাধুলা করার পর সে তার মালকিনের পাশে ঘুমিয়ে পরেছিল।
ঘুম থেকে উঠেই সে বুঝতে পারে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে।
ডাগমার বলেন, “ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি, সে কেমন যেন খুঁড়িয়ে হাঁটছে।”
এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে।
খেলাধুলা করা থেকে শুরু করে, তার পায়ের কোনো সাড়া ছিল না।
দ্রুত এমনটা হওয়ায় তারা দ্রুত পশুচিকিৎসকের কাছে যান।
চিকিৎসকরা প্রথমে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক ডিজিজ (IVDD) হয়েছে বলে সন্দেহ করেছিলেন।
কিন্তু এমআরআই পরীক্ষার ফল অন্য কথা বলল।
পরীক্ষায় ধরা পরে, টাইরিয়নের স্পাইনাল কর্ডে মারাত্মক প্রদাহ হয়েছে।
ডাক্তাররা জানান, টাইরিয়নের অটোইমিউন রোগ হয়েছে, যার নাম গ্রানুলোমাটোস মেনিনগোএনসেফলাইটিস (GME)।
এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মেরুরজ্জুর উপর আক্রমণ করে এবং প্যারালাইসিস হয়।
টাইরিয়নের সুস্থ হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না।
প্রথম ছয় মাস তার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
এরপর আকুপাংচার এবং হাইড্রোথেরাপির মাধ্যমে তার স্নায়ুগুলোকে উদ্দীপিত করার চেষ্টা করা হয়।
ধীরে ধীরে সে তার পায়ের উপর দাঁড়াতে শুরু করে এবং প্রথম পদক্ষেপ নেয়।
যদিও সে এখনো তার পায়ে কোনো অনুভূতি পায় না, তবে সে এখন “স্পাইনাল ওয়াকিং” করতে পারে।
যদিও এটি মস্তিষ্কের নির্দেশে হওয়া কোনো মুভমেন্ট নয়, তবুও এটা সত্যিই অসাধারণ।
প্যারালাইসিসের এক মাস পর টাইরিয়নের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়।
ডাগমার বলেন, “হুইলচেয়ারের ব্যাপারে একটা কথা বলা হয়েছিল, সব কুকুর নাকি এটা পছন্দ করে না।
তবে টাইরিয়ন যে এটা সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করবে, তা ভাবিনি।”
টাইরিয়ন যেন মুক্তি পেয়েছিল।
সে স্বাধীনভাবে দৌড়াতে পারছিল এবং এটা সে খুব উপভোগ করত।
টাইরিয়ন সব সময় হুইলচেয়ার ব্যবহার করে না।
বাড়ির ভেতরে বা নিরাপদ স্থানে সে হামাগুড়ি দিয়েই চলে।
তবে বাইরে যাওয়ার সময় হুইলচেয়ার দেখলে তার আনন্দের সীমা থাকে না।
প্যারালাইজড একটি কুকুরের দেখাশোনা করা সহজ ছিল না।
শুরুতে ডাগমার খুব হতাশ হয়ে পরেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলাম।
একদিন আমি কাঁদছিলাম, তখন টাইরিয়ন আমার কাছে এসে এমন একটা ভঙ্গি করল, যেন সে বলতে চাইছে, কী হয়েছে? চলো, খেলতে যাই।”
তখনই ডাগমার বুঝতে পারেন, টাইরিয়ন কোনো দুঃখ করছে না, বরং সে জীবনকে উপভোগ করতে চাইছে।
ধীরে ধীরে তিনি তার মানসিকতা পরিবর্তন করেন।
তাদের এই যাত্রা তিনি টিকটকে শেয়ার করেন, যেখানে অনেকেই তাদের মতো অভিজ্ঞতার কথা জানান।
ডাগমার বলেন, “তখন মানুষজন আমাকে বলছিল, আমি ভালো কাজ করছি, যা শুরুতে আমার মনে হয়নি।”
শারীরিকভাবে সবচেয়ে কঠিন ছিল টাইরিয়নের ব্লাডার বা মূত্রথলির যত্ন নেওয়া।
দিনে চারবার তার এই কাজটি করতে হয়, যা সময় মতো করাটা খুব জরুরি।
ডাগমার বলেন, “আমার কোনো ৯টা-৫টা’র চাকরি নেই, তাই হয়তো এটা ম্যানেজ করতে পারছি।
নিয়মিত সময় মেনে এটা করতে হয়।”
সব বাধা পেরিয়ে এই অভিজ্ঞতা তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে।
ডাগমার মজা করে বলেন, “কখনো কখনো মনে হয়, আমরা হয়তো খুব বেশি কাছাকাছি চলে এসেছি।
তবে সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, এটা কোনো বিষয় নয়।”
টাইরিয়নের মালকিন তাদের একসঙ্গে কাটানো সময়গুলো স্মরণ করে এখন আরও শক্তিশালী ও পরিণত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “অন্যান্য কুকুরের চেয়ে টাইরিয়নের জীবন কঠিন, তবে এর মানে এই নয় যে, সে আনন্দ বা মজা করতে পারবে না।
আমার মনে হয়, এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে।”
ডাগমার খুব শীঘ্রই “Wag & Wheel” নামে একটি ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন।
এখানে বিশেষভাবে প্রতিবন্ধী কুকুরদের মালিকদের জন্য পোশাক ও অন্যান্য জিনিস পাওয়া যাবে।
এই ব্যবসার লাভের একটি অংশ প্রতিবন্ধী পশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে দান করা হবে।
তথ্য সূত্র: পিপল