সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি খারিজ করেছে যে তারা সুদানের আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সকে (আরএসএফ) চীন থেকে তৈরি অস্ত্র সরবরাহ করেছে। আল জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটির মতে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে আরএসএফ যোদ্ধাদের হাতে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাউইটজার কামানের ব্যবহারের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। এই অভিযোগের পরেই ইউএই’র পক্ষ থেকে এমনটা জানানো হলো।
ইউএই’র নিরাপত্তা ও সামরিক বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী সালেম আল-জাবেরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তিনি আরও জানান, আবুধাবি দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পক্ষ থেকেও এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
আল-জাবেরীর মতে, “সুদানের চলমান সংঘাতে কোনো পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ইউএই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, তারা আরএসএফ যোদ্ধাদের হাতে চীনা জিবি৫০এ গাইডেড বোমা এবং ১৫৫ মিলিমিটারের এএইচ-৪ হাউইটজার ব্যবহারের ফুটেজ যাচাই করেছে। মানবাধিকার সংস্থাটি সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য উল্লেখ করে জানায়, চীন থেকে এই হাউইটজারগুলো কেনার একমাত্র পরিচিত ক্রেতা ছিল ইউএই।
তবে আল-জাবেরী এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, এই অস্ত্র ব্যবস্থা “প্রায় এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে” এবং এটি কেবল ইউএই’র জন্য নয়। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনটিকে “ভুল পথে চালিত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরএসএফ যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের শিকার হয়েছে। এরপরে তারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন হামলা জোরদার করেছে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় শহর পোর্ট সুদানে ক্রমাগত হামলা চালানো হচ্ছে। শুক্রবারও সেখানে ড্রোন হামলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা এএফপি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শত্রুদের ড্রোন’ ভূপাতিত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিমানবন্দরের একমাত্র আন্তর্জাতিক টার্মিনাল, প্রধান জ্বালানি সংরক্ষণাগার এবং প্রধান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার খবর জানিয়েছে। পোর্ট সুদান বর্তমানে সুদানের প্রধান সাহায্য কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সুদানে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলাগুলো “মানবিক চাহিদা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলবে।
এর আগে, সুদানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসিন ইব্রাহিম গত মঙ্গলবার ইউএই’র বিরুদ্ধে আরএসএফকে সমর্থন করে দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন এবং এর ফলস্বরূপ, সুদানের সামরিক সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। জবাবে, আবুধাবি অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুদানের সরকারের বৈধতা প্রত্যাখ্যান করে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সম্প্রতি সুদানের করা গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। আদালত জানায়, এই বিষয়ে তাদের এখতিয়ার নেই। কারণ, গণহত্যার কনভেনশনের ৯ অনুচ্ছেদ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইউএই’র কর্মকর্তা রিম কিতাইত এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে “স্পষ্ট ও সিদ্ধান্তমূলক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা