যুদ্ধ-বিধ্বংসী সুদানে অস্ত্র? আমিরাতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ!

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে সুদানে চলমান যুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদনে দেশটির বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, আগামী ১৫ই এপ্রিল লন্ডনে সুদানের শান্তি আলোচনায় আমিরাতকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরাত গোপনে প্রতিবেশী দেশ চাদের মাধ্যমে সুদানের প্যারামিলিটারি বাহিনী, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) অস্ত্র সরবরাহ করছে। যদিও আমিরাত সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আমিরাতের বিমানবন্দর থেকে আসা কার্গো বিমানগুলো নিয়মিত চাদে অবতরণ করে। এরপর সেখান থেকে অস্ত্রগুলো সুদানে পাচার করা হতে পারে।

জাতিসংঘের পাঁচজন বিশেষজ্ঞের একটি দল গত নভেম্বরে ১৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সুদানের নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমিরাত থেকে আসা “ইল্যুশিন-৭৬টিডি” নামের কার্গো বিমানগুলো নিয়মিত চাদের আমদজারাস বিমানবন্দরে অবতরণ করত।

এরপর সেখান থেকে অন্তত তিনটি স্থলপথ ব্যবহার করে সুদানে অস্ত্র পাচার করা হতো। বিমানগুলোর গতিবিধিতে সন্দেহজনক কিছু বিষয় ছিল।

প্রায়ই বিমানগুলো তাদের যাত্রাপথের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যেত।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ, তিনি বিতর্কিতভাবে ১৫ই এপ্রিল লন্ডনের ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে সুদানের শান্তি আলোচনার জন্য আমিরাতসহ আরও ১৯টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এই আলোচনার দিনটি সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকী। এই যুদ্ধে ১ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

তবে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদনে সরাসরি অস্ত্র পাচারের প্রমাণ পাননি। তারা বিমানের ফ্লাইটপথের কিছু অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু বিমানের ভেতরে কী ছিল, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-এ সুদানের পক্ষ থেকে আমিরাতের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সুদানের অভিযোগ, যুদ্ধে আমিরাত আরএসএফকে সমর্থন জুগিয়েছে এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।

অন্যদিকে, আমিরাত সরকার এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, তারা সুদানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমিরাতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

জাতিসংঘের একটি সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আমিরাতের বিরুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, সুদানে চলমান সংঘাত এবং এতে আমিরাতের জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বিশেষ করে, এল ফাশের শহরে আরএসএফের হামলায় দুই শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর এই উদ্বেগের মাত্রা আরও বেড়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *