পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত কিছু প্রাণীর বিবর্তন নিয়ে নতুন একটি গবেষণা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অষ্ট্রেলিয়াতে পাওয়া একটি জীবাশ্ম, যা প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগের, তা বর্তমান প্লাটিপাস ও ইঁদুর-জাতীয় প্রাণী এচিডনার পূর্বপুরুষের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
এই গবেষণাটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আদি ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও গভীর করবে।
গবেষণাটি মূলত *ক্রায়োরিকটিস ক্যাডবুরি* নামক একটি প্রাণীর জীবাশ্ম নিয়ে করা হয়েছে। এই জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ডাইনোসর কোভে।
বিজ্ঞানীরা এর ভেতরের গঠন পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, এটি জলচর প্লাটিপাসের মতোই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। যেমন এর হাড়ের দেয়াল পুরু এবং ভেতরের ফাঁকা অংশ ছোট।
এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এক সময় প্লাটিপাসের পূর্বপুরুষরাও জলজ জীবন ধারণ করত।
প্লাটিপাস ও এচিডনা—উভয়েই মোনোট্রিম বর্গের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এরা ডিম পাড়ে।
প্লাটিপাসের হাঁসের মতো ঠোঁট ও পায়ের পাতা এবং বেঁজির মতো লেজ রয়েছে। এরা মূলত পানিতে খাবার খুঁজে বেড়ায়।
অন্যদিকে, এচিডনা স্থলচর প্রাণী, যা কাঁটাযুক্ত শরীর এবং পিছনের দিকে মুখ করা পায়ের জন্য পরিচিত। এদের দাঁত নেই এবং বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর জন্য স্তনবৃন্তের বদলে চামড়ার মাধ্যমে দুধ নির্গত হয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, *ক্রায়োরিকটিস ক্যাডবুরি* সম্ভবত প্লাটিপাস এবং এচিডনা উভয়েরই সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক, অধ্যাপক সুজান হ্যান্ডের মতে, “আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, আধুনিক প্লাটিপাসের জলচর জীবনযাত্রা অন্তত ১০০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল।
আর এচিডনা অনেক পরে পুরোপুরি স্থলচর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়েছে।”
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তনের ইতিহাসে এই ধরনের পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জল থেকে স্থলে বিবর্তনের ঘটনা বিরল।
এই পরিবর্তনের জন্য কঙ্কালতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, যেমন—জমিতে হাঁটার জন্য অঙ্গের নতুন অবস্থান এবং কম শক্তি ব্যবহারের জন্য হালকা হাড়।
এচিডনার পায়ের পিছনের দিকে মুখ করার কারণ সম্ভবত এটি একসময় সাঁতার কাটার জন্য তার পেছনের পা ব্যবহার করত।
এই গবেষণা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করে।
কেন্টাকির লুইভিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গিলার্মো ডব্লিউ. রুজিয়ের মতে, “মোনোট্রিমগুলো হলো সেই অতীতের জীবন্ত নিদর্শন, যা আমাদের স্তন্যপায়ী প্রাণী, এমনকি মানুষ কীভাবে এসেছি, তা বুঝতে সাহায্য করে।”
বর্তমান সময়ের এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, জীবনের বিবর্তন এক জটিল প্রক্রিয়া। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ফল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন