উগান্ডায় কফি বিপ্লব! নারীদের সাফল্যে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট

উগান্ডায় কফি চাষে নারীদের ক্ষমতায়ন: এক নতুন দিগন্ত।

উগান্ডা, আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কফি উৎপাদনকারী দেশ। এখানকার কফি শিল্পে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মেরিদাহ নান্দুদু নামের এক উদ্যোক্তা ‘বায়ায়া স্পেশালিটি কফি’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেছেন, যা কফি চাষে জড়িত নারীদের বিশেষভাবে সহায়তা করে। এই সংস্থার মূল লক্ষ্য হলো, কফি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নারীদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং তাদের আর্থিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করা।

উগান্ডার পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে সিরোনকো জেলায়, যেখানে উন্নত মানের অ্যারাবিকা কফি উৎপাদিত হয়, সেখানকার নারীরা যুগ যুগ ধরে কফি চাষের সঙ্গে জড়িত থাকলেও, বিক্রয়লব্ধ অর্থের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সাধারণত পুরুষরাই কফি বিক্রি করতেন এবং অর্জিত অর্থ নিজেদের কাছে রাখতেন।

ফলে, নারীদের ক্ষমতায়ন ছিল খুবই সীমিত। মেরিদাহ নান্দুদু এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি তাঁর সংস্থায় নারীদের কাছ থেকে কফি কিনলে প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত ২০০ উগান্ডা শিলিং প্রদান করেন।

এই অতিরিক্ত অর্থ নারীদের উৎসাহিত করে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করে। এর ফলে, আগে যেখানে পুরুষরা কফি বিক্রির দায়িত্বে থাকতেন, সেখানে এখন নারীরাও সরাসরি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন।

মেরিদাহ নান্দুদুর এই উদ্যোগের ফলস্বরূপ, বায়ায়া স্পেশালিটি কফির সঙ্গে যুক্ত নারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সংস্থার সঙ্গে ৬০০ জনের বেশি নারী জড়িত, যা ২০২২ সালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

সিরোনকো জেলার স্থানীয় লুমাসাবা ভাষায় ‘বায়ায়া’ শব্দের অর্থ হলো ‘বোন’। নান্দুদু তাঁর এই প্রকল্পের মাধ্যমে কফি চাষের সঙ্গে জড়িত নারীদের মধ্যে এক ধরনের ‘বোনত্বের’ সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছেন।

উগান্ডা কফি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশটি ৬ মিলিয়নের বেশি কফি ব্যাগ রপ্তানি করেছে, যা থেকে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় উগান্ডার কফির চাহিদা বেড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিবর্তনের ফলে নারীরা এখন কেবল কফি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নয়, বরং আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। লিনেট গিমোনো নামের একজন নারী, যিনি ২০২২ সালে এই দলে যোগ দিয়েছেন, তিনি জানান, এখন তিনি তাঁর পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন সাবান ও চিনি, কিনতে পারছেন, যা আগে তাঁর স্বামীর অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হতো।

জুলিয়েট কওয়াগা নামের আরেকজন সদস্য জানান, তাঁর স্বামীও এখন তাঁকে কফি বিক্রির জন্য উৎসাহিত করেন, কারণ এর মাধ্যমে তাঁদের পরিবারের জন্য কিছু আয়ের সংস্থান হয়।

মেরিদাহ নান্দুদুর এই উদ্যোগ উগান্ডার কফি শিল্পে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি নারীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও সহায়তা করছে। তিনি এখন কফি রপ্তানি শুরু করার পরিকল্পনা করছেন, যা এই নারীদের জন্য আরও বড় সুযোগ তৈরি করবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *