যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি অব্যাহত, যদিও লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে: নতুন প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে। ফিলিস্তিনি যুব আন্দোলন, প্রগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ার্কার্স ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইন-এর একটি যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে কিছু লাইসেন্স স্থগিত করার পরেও ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো ইসরায়েলে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার সম্ভবত ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ভুল তথ্য দিয়েছে। তাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার পরেও ব্রিটেন ‘বোমা, গ্রেনেড, টর্পেডো, মাইন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অনুরূপ যুদ্ধাস্ত্র ও তাদের যন্ত্রাংশ’-এর মতো ৮,৬৩০টি আলাদা সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রিটিশ এমপি এবং মন্ত্রীরা, বিশেষ করে তৎকালীন পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেইনল্ডস, হাউস অফ কমন্সে বারবার জানিয়েছিলেন যে সরকার এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রমাণ দেখা যাচ্ছে, তারা এখনো ইসরায়েলে এই বিমানের উপাদান পাঠাচ্ছে, যা এখনো চলমান রয়েছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ডেভিড ল্যামি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রায় ৩৫০টি অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্সের মধ্যে ২৯টি স্থগিত করার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সরকার এই লাইসেন্সগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঝুঁকি খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে কিছু লাইসেন্স ছিল, যা ‘যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ব্যবহারের জন্য গগলস এবং হেলমেট’-এর মতো সরঞ্জাম সরবরাহ করত।
প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েল ট্যাক্স অথরিটির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ল্যামি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে সংসদ এবং জনসাধারণকে ভুল বুঝিয়েছিলেন। এই বিষয়ে প্রাক্তন লেবার শ্যাডো চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল বলেছেন, সরকারের এখন অনেক কিছু ব্যাখ্যা করার আছে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি পররাষ্ট্র সচিব বা অন্য কোনো মন্ত্রী সংসদকে ভুল পথে চালিত করেন, তবে তা পদত্যাগের কারণ হতে পারে এবং এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ তৈরি করতে পারে। সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি গোপন রেখেছে।’
লেবার পার্টির প্রাক্তন নেতা এবং স্বতন্ত্র এমপি জেরেমি করবিন বলেছেন, সরকারের উচিত ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে যুক্তরাজ্যের ভূমিকার বিষয়ে একটি জন তদন্তের আহ্বান জানানো। তিনি জানতে চান, ‘যুক্তরাজ্য সরকার কবে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি পরিষ্কার করবে? জনসাধারণের কাছে যুক্তরাজ্যের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা উচিত এবং সত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না।’
অন্যদিকে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, সরকার ইতিমধ্যে ‘গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটাতে পারে’ এমন ‘প্রাসঙ্গিক লাইসেন্সগুলো’ স্থগিত করেছে। তারা আরও জানায়, ইসরায়েলের জন্য অবশিষ্ট লাইসেন্সগুলির বেশিরভাগই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য নয়, বরং বেসামরিক উদ্দেশ্যে বা পুনরায় রপ্তানির জন্য ব্যবহার করা হয় এবং তাই গাজায় যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে না। তাদের মতে, এফ-৩৫ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এটি ন্যাটোর কৌশলগত ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার বৃহত্তর প্রভাবের কারণে একটি ব্যতিক্রম।
পররাষ্ট্র দপ্তর আরও বলেছে, ‘গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বিস্তারের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা রয়েছে। আমরা সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার, হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার এবং স্থায়ী শান্তির জন্য কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা