ফুঁসছে বিশ্ব! ফিলিস্তিনিদের উপর সহিংসতার অভিযোগে ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলি ইসরায়েলি দুই চরমপন্থী মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা মন্ত্রীরা হলেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সম্পদ জব্দ করা হবে।

এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই মন্ত্রীর ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহিংসতা উসকে দেওয়া এবং বিতর্কিত মন্তব্য। বেন গভির ও স্মোটরিচ উভয়েই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতা, যারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকার টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীর নিয়ে প্রায়ই উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন। গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও তাদের কঠোর অবস্থানের জন্য সমালোচিত হতে হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলো যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে। বিবৃতিতে দেশগুলো জানায়, “আমরা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা এবং এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আনতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে অবিচলভাবে বিশ্বাস করি। তবে চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং বসতি সম্প্রসারণের কারণে তা হুমকির মুখে পড়েছে।”

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই পদক্ষেপগুলো “যুদ্ধবিরতি অর্জনে, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকার ও হামাসের মধ্যে কোনো “সমতা” নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে আছে।

তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “অবশ্যই, এটিকে গাজায় মানবিক বিপর্যয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না। আমরা বেসামরিক নাগরিকদের চরম দুর্ভোগে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যার মধ্যে জরুরি সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, বেন গভির ও স্মোটরিচ উভয়েই পশ্চিম তীরে বসবাস করেন, যা ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশের মতে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ।

নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় দুই মন্ত্রীই তাদের নীতির প্রতি অবিচল থাকার অঙ্গীকার করেছেন। বেন গভির বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা আমাকে ভয় দেখায় না। আমি আমাদের দেশের জন্য, আমাদের জনগণের জন্য কাজ চালিয়ে যাব।” স্মোটরিচ বলেছেন, “আমি শুনেছি ব্রিটেন আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইছে, কারণ আমি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দিচ্ছি। এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না।”

ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার জানিয়েছেন, সরকার খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করবে এবং এই “অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের” জবাব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *