ব্রিটিশ হাইকোর্ট চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে মরিশাসের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের একটি চুক্তি সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এই স্থগিতাদেশ আসে, যখন মরিশাস সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল।
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত চাগোস দ্বীপপুঞ্জ, যা একসময় ব্রিটিশ ভারতীয় মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশ ছিল, সেই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এই দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গেই রয়েছে বিতর্কিত দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটি।
বার্নাডেট ডুগাস ও বেরট্রিস পম্পে নামক দুইজন ব্রিটিশ নাগরিক, যারা চাগোসের দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যান। তাঁদের দাবি ছিল, দ্বীপপুঞ্জগুলো যুক্তরাজ্যের অধীনেই থাকা উচিত।
তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেই বিচারপতি জুলিয়ান গুস ব্রিটিশ সরকারকে এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত বা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ নিতে সাময়িকভাবে বাধা দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য এই দ্বীপপুঞ্জের উপর তাদের অধিকার বজায় রাখবে।
পরবর্তী শুনানির জন্য স্থানীয় সময় সকাল ১০:৩০ (০৯:৩০ জিএমটি) ধার্য করা হয়েছে।
এই দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮১৪ সাল থেকে এই অঞ্চলের উপর যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
১৯৬৫ সালে মরিশাস থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে আলাদা করা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এখানকার প্রায় ১,৫০০ বাসিন্দাকে বিতাড়িত করে মরিশাস ও সেশেলসে পাঠানো হয়েছিল, যার মূল কারণ ছিল দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করা।
গত অক্টোবরে, ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে যে তারা দ্বীপপুঞ্জগুলো মরিশাসকে দেবে এবং একইসঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেবে, যা ৯৯ বছরের জন্য কার্যকর হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছিল। তবে, মরিশাসে সরকার পরিবর্তনের কারণে এবং কিছু খরচ সংক্রান্ত আলোচনার কারণে চুক্তিটি চূড়ান্ত হতে দেরি হচ্ছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, চাগোসের স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকার এবং তাঁদের দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁদের আইনজীবীর মতে, বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছাড়াই দ্বীপগুলো হস্তান্তরের চেষ্টা করাটা অতীতে তাঁদের প্রতি কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণেরই ধারাবাহিকতা।
বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। এই চুক্তির ভবিষ্যৎ এবং এর প্রভাব নিয়ে পরবর্তীতে আরও আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা