যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। ব্রেক্সিট ভোটাভুটির (Brexit vote) প্রায় নয় বছর পর, এই চুক্তিটি একদিকে যেমন কিছু মানুষের জন্য স্বস্তি এনেছে, তেমনি ব্রেক্সিটের ফলস্বরূপ সৃষ্টি হওয়া বিভাজনকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
এই চুক্তির ফলে ভিসা সংক্রান্ত কিছু সুবিধা, বিমানবন্দরের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার ভোগান্তি কমানো এবং যুক্তরাজ্যের বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য তাদের জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৎস্য শিকারী নৌবহরকে আরও ১২ বছর মাছ ধরার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই চুক্তিকে “উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তাঁর মতে, এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য “বিশ্ব মঞ্চে” পুনরায় নিজেদের স্থান করে নিতে পারবে। তবে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে বিভক্ত ব্রিটিশ সমাজে এই চুক্তির প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্য সরবরাহ খাতে শুল্ক কমানো এবং সীমান্ত চেকিং সহজীকরণের কারণে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
ব্রিটেনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সংগঠন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে রপ্তানিকারকদের জন্য নিয়মকানুন সহজ করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। জনমত জরিপেও দেখা গেছে যে, ৬২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাইছে, যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ এর বিপক্ষে।
অন্যদিকে, এই চুক্তির কিছু সমালোচকও রয়েছেন। তাঁদের মতে, যুক্তরাজ্যের মৎস্য শিল্প এই চুক্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৎস্য শিকারী নৌবহরকে আরও বেশি দিন মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, ইউরোপীয় বিচার আদালতের এখতিয়ারে যুক্ত হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকে একটি “যথাযথ আর্থিক অবদান” রাখতে হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই চুক্তিকে “ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই চুক্তি ব্রেক্সিটের মূল উদ্দেশ্যকে দুর্বল করবে।
ব্রেক্সিট-এর পক্ষের অনেক সমর্থক মনে করেন, এটি জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে না। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে আরও ছাড় দিতে হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্য চুক্তির খুঁটিনাটি সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় বিচার আদালতের এখতিয়ারে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি যুক্তরাজ্যের জন্য একটি বড় ধরনের ছাড়।
এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যের বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে পারে এবং ভ্রমণ সহজ হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কিছু স্বস্তি এনে দিতে পারে। তবে, এটি ব্রেক্সিটের মূল উদ্দেশ্যকে কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা