ব্রেক্সিট: ইউকে-ইইউ’র যুগান্তকারী চুক্তিতে কি মিলল?

যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং মৎস্য শিকারের অধিকার সহ বিভিন্ন বিষয়কে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে। এই চুক্তির ফলে ব্রেক্সিটের (Brexit) পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়া এক শীর্ষ সম্মেলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যেখানে দুই পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মাছ ধরার অধিকার ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে, যদিও এর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে। এছাড়া, কৃষিজাত পণ্য, খাদ্য এবং পশুজাত পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।

এর ফলে সীমান্ত পারাপারের সময় ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই পক্ষ গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করতে রাজি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মুখ শনাক্তকরণ ডেটা শেয়ার করা।

পর্যটকদের জন্য সুখবর হলো, এখন থেকে ইউরোপের অনেক বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়াও, কার্বন ট্যাক্স এড়ানোর জন্য যুক্তরাজ্য ও ইইউ তাদের কার্বন বাজারকে যুক্ত করতে সম্মত হয়েছে।

এই পদক্ষেপের ফলে ২০৪০ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রায় ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা) যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই চুক্তির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ‘ইউথ মোবিলিটি স্কিম’ চালু করা। এর মাধ্যমে ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণরা উভয় অঞ্চলের কর্মপরিবেশে কাজ করার সুযোগ পাবে। তবে এই স্কিমের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার (Keir Starmer) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের জন্য খাদ্যমূল্য কমানো, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা, বিমানবন্দরের অপেক্ষার সময় কমানো এবং প্রতিরক্ষা খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে।

এছাড়াও, কার্বন ট্যাক্স থেকে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের রক্ষা করা এবং ইস্পাত শিল্পের সুরক্ষাও এই চুক্তির লক্ষ্য।

তবে, এই চুক্তির কিছু দিক নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল এবং মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলো যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইইউ’র মাছ ধরার অধিকারের সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এটি ব্রিটিশ মৎস্য শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই তাদের মধ্যেকার সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে চাইছে। যদিও এই চুক্তির কিছু দিক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে এটি ব্রেক্সিটের পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক নীতিতে কেমন প্রভাব পড়ে, সেদিকে এখন সকলের দৃষ্টি রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *