গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপের হুমকি: ফুঁসছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা!

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ এবং ত্রাণ সরবরাহের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নিতে ‘কংক্রিট পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশ তিনটির নেতারা এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বৃদ্ধি এবং সেখানকার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণের তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং এই ধরনের পদক্ষেপের জন্য ‘লক্ষ্যযুক্ত নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা ভূখণ্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য অভিযান জোরদার করেছেন।

এর আগে মার্চ মাসের শুরুতে তিনি খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করে দেন। নেতানিয়াহু বর্তমানে হামাসকে দায়ী করে আসছেন।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

তারা গাজায় খুব সামান্য পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করার বিষয়টিকেও ‘অপর্যাপ্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ফিলিস্তিনের যুক্তরাজ্য বিষয়ক রাষ্ট্রদূত হুসাম জুমলুত আল জাজিরাকে বলেন, এই তিনটি দেশের নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপে এই দেশগুলোর সমর্থন জরুরি।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ প্রশ্ন তোলেন, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাগুলো কাদের ওপর আরোপ করা হবে?

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী না করে পুরো ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।

এদিকে, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নয়েল বারোত মঙ্গলবার বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা ‘পুরোপুরি অপর্যাপ্ত’।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকারের নির্বিচার সহিংসতা ও মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে অবরুদ্ধ গাজা একটি ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক হামদাহ সালহুত জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে জানান, আন্তর্জাতিক চাপ নেতানিয়াহুর ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

কারণ, নেতানিয়াহু আগে ‘পরম বিজয়’ অর্জনের কথা বলেছিলেন এবং তিনি মনে করেন, তার দেশ ‘বর্বরতার বিরুদ্ধে সভ্যতার যুদ্ধ’ করছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডাসহ ২৩টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজার মানুষ এখন ‘অনাহারে’ দিন কাটাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মানবিক সহায়তাকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।

আল জাজিরার পক্ষ থেকে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে স্টেপ ভ্যাসেন জানান, মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার বিষয় আসতে পারে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রায় ৮০ দিন ধরে গাজায় অবরোধের কারণে মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং ইসরায়েল গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্বের এত সময় নেওয়াটা ‘উদ্বেগজনক এবং নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাজুড়ে হামলা জোরদার করেছে।

এতে ইতোমধ্যে ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত তিনজন শিশু।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *