যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিমান হামলা, ইয়েমেনে উত্তেজনা
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যৌথ বিমান হামলা চালিয়েছে।
মঙ্গলবার (গতকাল) চালানো এই হামলার কথা ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এই প্রথমবারের মতো দেশ দুটি এমন যৌথ অভিযান চালাল।
জানা গেছে, হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন তৈরির স্থানগুলোতে আঘাত হানতে এই হামলা চালানো হয়। রাজধানী সানার দক্ষিণে অবস্থিত কয়েকটি ভবনকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়, যেগুলোতে ড্রোন তৈরি করা হতো।
এই ড্রোনগুলো পরবর্তীতে সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজ ও নৌবহরের উপর হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রয়্যাল এয়ার ফোর্স (Royal Air Force) টাইফুন যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে এইসব স্থাপনায় আঘাত হানে। বেসামরিক নাগরিক বা সামরিক-বহির্ভূত স্থাপনার ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
হামলার পর সব বিমান নিরাপদে ফিরে আসে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়। এরপর তারা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ ও মার্কিন নৌবহরের ওপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি জলপথ। শুধু তাই নয়, তারা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করতে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার এবং সমুদ্র ও পানির নিচের ড্রোন ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাজ্য এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে হুতিদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম তারা এমন অভিযান প্রকাশ্যে স্বীকার করল।
ট্রাম্প প্রশাসন হুতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে এবং লোহিত সাগরে হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি বলেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য হলো হুতিদের পরবর্তী হামলাগুলো প্রতিরোধ করা। তিনি আরও জানান, লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘অপারেশন রাফ রাইডার’ নামে গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে হুতি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে। এতে তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের এক মাসের অভিযানে ৮০০ বারের বেশি হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে হুতি বিদ্রোহের বহু সেনা নিহত হয়েছে।
তবে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযান হুতিদের কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেনি। এমনকি বিদ্রোহীরা অনেক মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করতেও সক্ষম হয়েছে।
অন্যদিকে, হুতিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সম্প্রতি একটি মার্কিন বিমান হামলায় একটি কারাগারে থাকা কয়েক ডজন অভিবাসী নিহত হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন