গাজায় গণহত্যা: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ৮০০ জনের বেশি আইনজীবী, বিচারক ও শিক্ষাবিদ। সোমবার (গতকাল) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের কাছে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে, গাজায় গণহত্যার ঘটনা ঘটছে, অথবা অন্তত গণহত্যার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনও সেখানে সংঘটিত হচ্ছে।

চিঠিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, গাজায় মানবিক সহায়তা পুনরায় চালু করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার মতো পদক্ষেপ নিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের সাম্প্রতিক মন্তব্যের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়, যেখানে তিনি গাজার পুরো এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এবং হামাসকে নির্মূল করার কথা বলেছিলেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও আপিল আদালতের সাবেক বিচারকসহ শীর্ষস্থানীয় আইনজ্ঞরা। তারা উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। এর মাধ্যমে সরকারগুলো ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আইনজীবীরা ব্রিটিশ সরকারকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে এবং ইসরায়েলি মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ‘যুক্তিযুক্ত সন্দেহ’ রয়েছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল অংশীদারিত্বের রোডম্যাপ স্থগিত করারও দাবি জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের বাধ্যবাধকতাও যেন যুক্তরাজ্য নিশ্চিত করে। আইসিসি এরই মধ্যে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের মামলা চলছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সাবেক আপিল আদালতের বিচারক স্যার অ্যালান মোসেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ না করি, তবে যুক্তরাজ্যে শান্তি আশা করা যায় না।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো সরকার আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার কথা বলে, অথচ তা প্রমাণে কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তা সম্পূর্ণ অর্থহীন।”

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মানবাধিকার আইনের অধ্যাপক কনার গিয়ার্টি বলেছেন, “নিয়মহীন একটি বিশ্ব—এতে বিশৃঙ্খলা নেমে আসবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আইনজীবীরা জানেন, সেই পরিস্থিতি কেমন হবে—আর তাই তারা এটি এড়াতে চান।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৫৪,০৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,২৩,১২৯ জন আহত হয়েছেন। সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষ নিখোঁজ রয়েছে, যাদের মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *