যুক্তরাজ্যের (ইউকে) পুলিশ প্রধানরা সম্প্রতি ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তাদের মতে, এই প্ল্যাটফর্মগুলো অপরাধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে এবং তরুণদের ঝুঁকিতে ফেলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’-এর ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিস কমিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এমন উদ্বেগের কথা জানান।
এদের মধ্যে অ্যাভন অ্যান্ড সোমারসেটের চিফ কনস্টেবল এবং ধর্ষণ ও গুরুতর যৌন অপরাধ বিষয়ক ন্যাশনাল পুলিশ চিফ কাউন্সিলের প্রধান সারা ক্রু বলেন, সামাজিক মাধ্যমগুলো শিশুদের শোষণ ও নির্যাতনের ঝুঁকিতে ফেলছে।
তিনি উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেন, ১৮৫০ সালের আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের কথা, যেখানে “অনেক কিছুই দ্রুত ঘটছিল, কিন্তু সেখানে নিয়ন্ত্রণ ও আইনের প্রয়োগ ছিল খুবই কম।” ক্রু আরও যোগ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর মতো একটি সংকটকালে সমাজের সকল অংশ একত্রিত হয়ে যেমন সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছিল, তেমনি এক্ষেত্রেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
গ্লুচেস্টারশায়ারের ভারপ্রাপ্ত চিফ কনস্টেবল এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক ন্যাশনাল পুলিশ লিড ম্যাগি ব্লাইথ মনে করেন, সামাজিক মাধ্যম শুধু শিশু ও তরুণদের জন্যই নয়, বরং সমাজের জন্যও একটি “গুরুত্বপূর্ণ হুমকি”।
তিনি উল্লেখ করেন, অনলাইনে সহিংস দৃশ্য দেখার কারণে তরুণরা বাস্তবেও “গলা টিপে ধরার” মতো সহিংস আচরণ করছে। ব্লাইথ শিশুদের জন্য সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করা এবং একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের বিপদ সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
এক্ষেত্রে তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ টেনেছেন, যেখানে গত বছর থেকে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সারে পুলিশের চিফ কনস্টেবল টিম ডি মেয়ার মনে করেন, সামাজিক মাধ্যম “অপরাধকে উস্কে দিচ্ছে”।
তাঁর মতে, “১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা খুবই জরুরি।” কাউন্টার-টেররিজমের প্রধান ম্যাট জুকস জানান, গত বছর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই ছিল শিশু।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা এখন অনলাইনে তাদের মতবাদ প্রচার করতে এবং প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হচ্ছে। যদিও অনলাইন নিরাপত্তা আইন শিশুদের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে জুকসের মতে, তা যথেষ্ট নয়।
মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক সহকারী কমিশনার নীল বাসুও শিশুদের জন্য সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি এমন অনেক যুক্তি শুনি যেখানে বলা হয়, সহিংস ছবি ও মানুষের মধ্যে সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আমি ৩০ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করার পর তা বিশ্বাস করি না… এই ধরনের বিষয় যে কোনো প্রভাব ফেলে না, তা আমার কাছে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মনে হয়। তাই সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করা উচিত, এবং আমার মনে হয়, ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত এটা কার্যকর হতে পারে।
তবে জাতিসংঘের একটি গবেষণায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সঙ্গে সহিংসতার সরাসরি যোগসূত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়েছে, সহিংসতা বিস্তারের পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন কারণও দায়ী।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব ইয়ভেট কুপার সম্প্রতি টাইমস কমিশনকে বলেছেন, সরকার শিশুদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান