যুক্তরাজ্যের একটি আদালতের রায়ের জেরে দেশটির ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) অধিকার সংস্থাগুলো। তাদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ট্রান্স সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার, সম্মান এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি গুরুতর সংকট তৈরি করেছে। খবরটি জানা গেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে জানায়, ‘নারী’ এবং ‘লিঙ্গ’ বিষয়ক শব্দগুলো মূলত ‘পুরুষাঙ্গ নেই এমন জীববিদ্যাসম্মত নারী’ এবং ‘জীববিদ্যাসম্মত লিঙ্গ’ এর সঙ্গেই সম্পর্কিত। এই রায়ের পর, ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন (EHRC) নামক একটি সংস্থা জানায়, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় অনুসারে শৌচাগার এবং অন্যান্য পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন না। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন এলজিবিটিকিউ+ অধিকার সংস্থা, যেমন- স্টোনওয়াল, স্কটিশ ট্রান্স, এলজিবিটি কনসোর্টিয়াম এবং ট্রান্সঅ্যাকচুয়াল, যৌথভাবে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা কেইর স্টারমারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে একটি বৈঠকের আবেদন করেছেন। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, আদালতের এই রায় ব্যবসা, পরিষেবা এবং নাগরিক সমাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে এবং এর ফলে ট্রান্স সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
সংস্থাগুলো বিশেষভাবে মানবাধিকার কমিশন (EHRC)-এর দেওয়া তথ্যের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এটি মানবাধিকার আইন এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ার, কিশওয়ার ফকনার অবশ্য সমালোচকদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আদালতের এবং নিয়ন্ত্রকদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিষয়টির ওপর জনসাধারণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে তিনি আইনপ্রণেতাদের সম্পূর্ণ রায়টি পড়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে, তিনি সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি দূর করার উপর গুরুত্ব দেন। ফকনার আরও জানিয়েছেন, কমিশন একটি গণ-আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে, যেখানে রায়ের বাস্তব প্রভাবগুলো কিভাবে বিবেচনা করা যায়, সে বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে।
এদিকে, একটি অলাভজনক আইনি সংস্থা, গুড ল’ প্রজেক্ট (GLP), সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। তারা প্রায় ২০টি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ট্রান্স সম্প্রদায়ের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করতে কাজ করছে। এই নির্দেশিকায়, তাদের লিঙ্গের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ স্থানগুলো ব্যবহার করতে বাধা পেলে কি করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান