যুক্তরাজ্যের নাট্য জগতে দক্ষ কর্মীর অভাব, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ঘোষণা।
শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির প্রসারে নাটকের গুরুত্ব অপরিসীম। মঞ্চ নাটক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তা বহন করে নিয়ে যায়।
বর্তমানে, যুক্তরাজ্যের নাট্য জগতে দক্ষ কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে, যা এই শিল্পের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই সংকট মোকাবিলায় দেশটির ন্যাশনাল থিয়েটার (National Theatre) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ন্যাশনাল থিয়েটারের নতুন আর্টস্টিক ডিরেক্টর, ইন্ধু রুবাসিংহাম (Indhu Rubasingham) এবং নির্বাহী পরিচালক, কেট ভারা (Kate Varah)-এর নেতৃত্বে, এই সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হল পোশাক শিল্পী, মঞ্চ নির্মাণ কর্মী এবং প্রযুক্তিবিদ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী তৈরি করা।
জানা গেছে, পারফর্মিং আর্টস বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। একই সাথে, মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় (GCSE) নাটক বিষয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে (A-level) নাটক বিষয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ন্যাশনাল থিয়েটার তাদের বিদ্যমান ন্যাশনাল থিয়েটার স্কিলস সেন্টারকে (National Theatre Skills Centre) আরও বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক অফ আমেরিকার (Bank of America) সহায়তায় আগামী তিন বছরে এই কেন্দ্রটির কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এই কেন্দ্রটি পোশাক তৈরি, মঞ্চসজ্জা এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন বিভাগে প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এর ফলে, তরুণ প্রজন্মের কাছে নাট্য জগতের বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে ধারণা আরও স্পষ্ট হবে এবং তারা এই শিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত হবে।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির একজন সুবিধাভোগী সারা রে-ডবসন (Sarah Ray-Dobson)। তিনি জানান, “আমি আগে কখনো থিয়েটারে কাজ করিনি। মঞ্চের সরঞ্জাম তৈরি করার বিষয়টি আমার কল্পনার বাইরে ছিল, কিন্তু এখন খুব ভালো লাগছে।
এখানে আমি এমন অনেক দক্ষতা অর্জন করছি যা আমার ভবিষ্যতের কাজে সাহায্য করবে।”
যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি (Lisa Nandy) এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই দেশের তরুণ প্রজন্ম যেন সৃজনশীল শিল্পে প্রবেশ করতে পারে এবং তাদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায়।”
বর্তমানে, যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি খাতে প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মীপদ খালি রয়েছে। নটিংহ্যাম প্লেহাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফানি সির (Stephanie Sirr) জানান, কর্মী নিয়োগের জন্য তাদের একাধিকবার বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে।
অভিজ্ঞ কর্মীর অভাবের কারণে, অনেক সময় পুরনো কর্মীদের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে, তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ন্যাশনাল থিয়েটারের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি একদিকে যেমন নাট্য জগতের কর্মীদের অভাব পূরণ করবে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে, যেখানে শিল্পকলার প্রসারে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।