যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির গতি ফেরাতে আর্থিক খাতে সংস্কারের পথে হাঁটছে দেশটির সরকার। ট্রেজারি প্রধান র্যাচেল রিভস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর থেকে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো হবে, যাতে তারা ঝুঁকি নিতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
সরকারের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন ব্রিটেনের অর্থনীতি ক্রমাগত দুই মাস ধরে সংকুচিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কারের ফলে রাজকোষের উপরও চাপ বাড়ছে। মূলত ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোর উপর যে কঠিন নিয়মকানুন আরোপ করা হয়েছিল, এবার সেইগুলোর কিছু সংস্কার করা হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকগুলোর খুচরা ব্যবসা এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আলাদা করার নিয়ম (রিং-ফেন্সিং) শিথিল করা এবং ব্যাংকগুলোকে কী পরিমাণ মূলধন রাখতে হবে, সেই সংক্রান্ত নিয়ম পর্যালোচনা করা।
র্যাচেল রিভস জানান, গত এক দশকের মধ্যে আর্থিক পরিষেবা খাতে এটি সবচেয়ে বড় ধরনের সংস্কার। তিনি বলেন, “আমরা মূলত নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার সংস্কার করছি, যার ফলে কোম্পানিগুলো ঝুঁকি নিতে পারবে এবং প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারবে।”
এই পরিবর্তনের বিস্তারিত রূপরেখা দেওয়ার জন্য র্যাচেল রিভস লন্ডনে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হবেন। ট্রেজারি সূত্রে জানা গেছে, তিনি সেখানে বলবেন যে আর্থিক পরিষেবা খাত “সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে” রয়েছে।
এর মাধ্যমে অর্থনীতির সব খাতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের হাতে আরও বেশি অর্থ আসবে।
ট্রেজারি আরও জানিয়েছে, নতুন একটি নির্দেশিকা জারির মাধ্যমে বন্ধকী ঋণদাতাদের (mortgage-lenders) এখন থেকে বাড়ির ক্রেতাদের আয়ের সাড়ে চার গুণের বেশি ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এই নির্দেশনা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়লাভ করে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে তারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ, যেমন – শীতকালে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য গৃহ গরমের ভর্তুকি বাতিল করা এবং কল্যাণ খাতে ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা, জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। যদিও পরে সরকার এই সিদ্ধান্তগুলো থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে, যা ভবিষ্যতে কর বাড়ানোর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি, র্যাচেল রিভসকে পার্লামেন্টে অশ্রুসিক্ত অবস্থায় দেখা যায়, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। ট্রেজারি জানায়, তিনি একটি ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
র্যাচেল রিভসের চোখের জলের কারণে সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে গিয়েছিল, তবে প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সমর্থনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস