যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ: ট্রাম্প-পুতিনের চাপে ইউরোপের দিকে ঝুঁকছে?

ব্রিটেন এখন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য “আমেরিকা প্রথম” নীতি এবং অন্যদিকে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব – এই দুইয়ের প্রভাবে ব্রেক্সিটের পর দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাইছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মনে করেন, ইউক্রেনকে স্থিতিশীল করার জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করা প্রয়োজন, যেখানে ব্রিটেনের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি, ইইউ ঘোষণা করেছে যে তারা প্রতিরক্ষা খাতে ১৫ হাজার কোটি ইউরোর একটি বিনিয়োগ প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রকে, কারণ তারা ইইউর সদস্য নয়।

তবে, ব্রিটেনের জন্য এখনো সুযোগ রয়েছে। যদি দুই পক্ষ দ্রুত একটি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা চুক্তি করতে পারে, তাহলে সম্ভবত এই প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের সীমিত প্রবেশাধিকার মিলতে পারে। ব্রিটেনের লেবার পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই ইইউর সঙ্গে এমন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষে।

ধারণা করা হচ্ছে, মে মাসে ইইউ-ইউকে শীর্ষ সম্মেলনে এই বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

প্রথমে, ইইউ প্রস্তাব দিয়েছিল যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো তহবিলের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত পেতে পারবে। তবে, আলোচনা সফল হলে এই পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর অবদান অনেক।

উদাহরণস্বরূপ, বারো, রোজাইথ, ওয়ারটন এবং সামলেসবারির মতো শহরগুলোতে অবস্থিত জাহাজ নির্মাণ ও বিমান তৈরির কারখানাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব, পিট হেগসেথ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে ওয়াশিংটন এখন ইউরোপের সুরক্ষার ওপর আগের মতো জোর দিচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাজ্যের জন্য ইউরোপের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান স্থগিত করার ঘটনাগুলোও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনকে দেওয়া অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমানগুলোতে কারিগরি ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। এমনকি, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে পর্যন্ত বিবৃতি দিতে হয়েছে যে, দূর থেকে বিমানটি অকেজো করার কোনো “সুইচ” তাদের হাতে নেই।

যদিও সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হল, যুক্তরাষ্ট্রের লজিস্টিকস এবং সফটওয়্যার সহায়তা ছাড়া এফ-৩৫ দ্রুত অচল হয়ে পড়তে পারে।

ঐতিহাসিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গভীর সামরিক সহযোগিতা বিদ্যমান। কিন্তু ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকলে সংকটকালে এই সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই, যুক্তরাজ্যের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে একই সঙ্গে ইউরোপের সঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা শিল্পখাতে সম্পর্ক আরও গভীর করা।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা হলো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সব সময় পরিবর্তনশীল। তাই, নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে নতুন জোট গঠনের প্রস্তুতি রাখা অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *