যুক্তরাজ্যে সমাজকল্যাণ খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৭০০ বিলিয়ন বাংলাদেশি টাকা) সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধাগুলো কঠিন করে তোলায় অনেকে এর তীব্র সমালোচনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সরকার এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যখন দেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগের কনজারভেটিভ সরকারের দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়ভার বর্তমান সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবেই এই কাটছাঁট জরুরি। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অসুস্থতা ও অক্ষমতা ভাতার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়। কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এই খাতে ব্যয় বেড়েছে, কারণ অনেক মানুষ কাজ করতে পারছেন না এবং জীবন ধারণের জন্য সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে দীর্ঘ কোভিড (Long COVID) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিও একটি কারণ হতে পারে। তাছাড়াও, মহামারীর সময় সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছিল।
সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যারা স্বাস্থ্যগত কারণে সরকারি সহায়তা পান, তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করা হবে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভাতার (Personal Independence Payment – PIP) জন্য আবেদন করার নিয়ম আরও কঠোর করা হচ্ছে।
এই ভাতার আওতায় অসুস্থ বা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ দেওয়া হয়। এই ভাতার দুটি অংশ রয়েছে – একটি হলো দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য এবং অন্যটি চলাচলের জন্য।
বর্তমানে ৩৬ লক্ষ মানুষ এই সুবিধা পান। নতুন নিয়মানুযায়ী, যারা এই ভাতা পান, তাদের মধ্যে যাদের অসুস্থতা তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর, তাদের জন্য সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
যেমন, খাবার প্রস্তুত করতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া, গোসল করতে বা পোশাক পরতে সাহায্য করা এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে নম্বর কমিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, এই সুবিধাভোগীদের নিয়মিতভাবে পুনরায় মূল্যায়ন করা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সংস্কারের ফলে দীর্ঘমেয়াদে সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা আরও টেকসই হবে। তবে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে।
তারা বলছেন, এর ফলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। অনেকে মনে করছেন, সরকার দ্রুত কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে চাইছে, যা সমাজের দুর্বল অংশের মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই কাটছাঁটের ফলে যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) খুব সামান্য পরিবর্তন আসবে। তাদের মতে, যুক্তরাজ্যের প্রধান সমস্যা হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া।
সরকারের এই পদক্ষেপ সেই সমস্যা সমাধানে খুব বেশি সাহায্য করবে না। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা