যুক্তরাজ্যে এক নারীর সফল জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বিরল এক শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া গ্রেস ডেভিডসন নামের এক নারী, যিনি জরায়ুবিহীন অবস্থায় ছিলেন, তার বোন অ্যামি পার্ডির জরায়ু দানের মাধ্যমে মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
খবরটি শুধু ডেভিডসন দম্পতির জন্যই আনন্দের নয়, বরং যেসব নারী জন্মগতভাবে জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্যেও এটি নতুন আশা জাগিয়েছে।
লন্ডনের কুইন শার্লটস অ্যান্ড চেলসি হাসপাতালে গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় তাদের কন্যাসন্তান অ্যামি ইসাবেলের।
মা হওয়ার পর গ্রেস ডেভিডসন বলেন, “আমার কাছে এখনো অবিশ্বাস্য লাগছে। মনে হচ্ছে, আমি যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটি পেয়েছি।”
২০১৬ সালে গ্রেসের শরীরে ‘মায়ার-রকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার সিন্ড্রোম’ (MRKH) ধরা পড়ে।
এই বিরল অবস্থার কারণে মেয়েদের জরায়ু তৈরি হয় না। তবে ডিম্বাশয় স্বাভাবিক থাকায় তারা ডিম্বাণু তৈরি করতে সক্ষম হন।
চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত নারীদের সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে জরায়ু প্রতিস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান।
যুক্তরাজ্যে এর আগে আরও তিনটি জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তবে জীবিত দাতার থেকে জরায়ু নিয়ে প্রথম সন্তানের জন্ম এটিই।
জানা যায়, এই চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড খরচ হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় অনেক বেশি।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত একশটির বেশি জরায়ু প্রতিস্থাপন হয়েছে এবং এর মাধ্যমে অন্তত ৫০ জন শিশুর জন্ম হয়েছে।
২০১৪ সালে সুইডেনে প্রথম সফলভাবে জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে একটি শিশুর জন্ম হয়।
ডেভিডসন দম্পতি তাদের মেয়ের জন্মের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক, নার্স এবং অস্ত্রোপচার টিমের প্রতি।
সন্তানের জন্ম দেওয়া অ্যামির বোন, অ্যামি পার্ডি বলেন, “আমার বোনের মা হওয়ার আনন্দ দেখাটা ছিল অসাধারণ, যা ভোলার নয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সাফল্যের ফলে ভবিষ্যতে আরও অনেক নারী এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে মা হওয়ার সুযোগ পাবেন।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে আরও দশ জনেরও বেশি নারী এই প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান