যুদ্ধবিরতি ভেস্তে, কিয়েভে ফের বিমান হামলার সতর্কতা!

ইউক্রেনে রাশিয়ার ঘোষিত এক দিনের ইস্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরেই দেশটিতে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। সোমবার ভোরে কিয়েভ এবং পূর্বাঞ্চলে হামলার সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

খবর পাওয়া যাচ্ছে, মিকোলাইভ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই যুদ্ধবিরতিকে রাশিয়ার একটি ‘লোক দেখানো’ কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন।

রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একতরফাভাবে ইস্টার সানডে উপলক্ষে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। তবে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সময়ের মধ্যেও রুশ সেনারা বিভিন্ন ফ্রন্টলাইনে ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে।

জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্তত ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করার প্রমাণ দিক তারা, যাতে আলোচনার একটা সুযোগ তৈরি হয়।

কিয়েভের সামরিক প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, সোমবার ভোর ৪টা ৪১ মিনিটে শহরের বাসিন্দাদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। মিকোলাইভের মেয়র ওলেক্সান্ডার সেনকেভিচ জানান, তাদের শহরে বিস্ফোরণ হয়েছে।

তবে এটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নাকি বোমা হামলা, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

অন্যদিকে, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের গভর্নর সের্হি লিসাক টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী ওই অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি খাদ্য প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে।

তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার কোনো বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে তারা রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রায় ৩,০০০ ঘটনা রেকর্ড করেছে।

জেলেনস্কি সোমবার জানান, ফ্রন্টলাইনের পকরোভস্ক এলাকায় সবচেয়ে বেশি হামলা ও গোলাবর্ষণ হয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ভোরোনেজ অঞ্চলেও দুই ঘণ্টার জন্য বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের অবস্থানে ৪৪৪ বার হামলা চালিয়েছে এবং ৯০০টির বেশি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এতে বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে। তবে রয়টার্স এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।

যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, উভয় পক্ষ সম্ভবত ‘এই সপ্তাহে’ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শান্তির আলোচনা থেকে সরে আসারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যদি না দ্রুত কোনো অগ্রগতি হয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ক্রিমিয়া এবং আরও চারটি ইউক্রেনীয় প্রদেশকে রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। এছাড়া, মস্কোকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার মতো প্রস্তাব দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

ক্রেমলিন এখনো তাদের মূল লক্ষ্য অর্জনের ওপর জোর দিচ্ছে।

এর মধ্যে রয়েছে জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানো, ইউক্রেনের সামরিকীকরণ এবং দেশটির ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিশ্চিত করা।

জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন।

গত মাসে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং খনিজ সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছে।

তবে হোয়াইট হাউসের রাশিয়া-পন্থী মনোভাবের কারণে জেলেনস্কি কিছুটা হতাশ বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যা সামরিক সহায়তা কমানো এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান স্থগিত করার মতো পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে।

রবিবার জেলেনস্কি সরাসরি ফক্স টেলিভিশন স্টেশনের সমালোচনা করেন, যারা মস্কোতে রাশিয়ার প্যাট্রিয়ার্কের সঙ্গে পুতিনের ইস্টার প্রার্থনার লাইভ সম্প্রচার করেছিল এবং কিয়েভকে ভুলভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ব্যাখ্যা চেয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘যদি এটি ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক বিবৃতি না হয়ে ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং যারা এই ভুল করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত।’

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *