ইউক্রেন সরকার সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যেখানে তারা দেশের একটি অর্থোডক্স চার্চকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে। এই চার্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে এটি এখনো মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং রুশ আগ্রাসনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
খবরটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই, দেশটির সরকার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো কিছুই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে, ইউক্রেনীয় সরকার ইতোমধ্যেই রুশপন্থী হিসেবে পরিচিত একটি অর্থোডক্স চার্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূলত, এই চার্চটি ‘ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স চার্চ’ (Ukrainian Orthodox Church) নামে পরিচিত, যা ঐতিহাসিক দিক থেকে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল।
সরকারের অভিযোগ, এই চার্চটি তাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে এখনো মস্কোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।
যদিও, চার্চ কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই রাশিয়ার আক্রমণকে নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে তারা মস্কো থেকে নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে। তারা তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মস্কোর প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের নাম উল্লেখ করাও বন্ধ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কিরিল রুশ আগ্রাসনের একজন বড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এই বিষয়ে ইউক্রেনীয় সরকারের পদক্ষেপ মূলত একটি আইনের ফল, যা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো ধর্মীয় সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই চার্চের বিরুদ্ধে আদালতে একটি আবেদন পেশ করেছে, যাতে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যায়।
যদি আদালত সরকারের পক্ষে রায় দেয়, তবে চার্চের উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স চার্চের আইনজীবীরা সরকারের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তাদের মতে, চার্চটি মস্কো থেকে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে আলাদা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তারা দেশের বাইরেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সহায়তা করার একটি অংশ।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ নিজেদের অর্থোডক্স হিসেবে পরিচয় দেয়, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ‘ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স চার্চ’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। বরং, তারা ‘ইউক্রেনের অর্থোডক্স চার্চ’-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, যা ২০১৮ সালে কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ কর্তৃক স্বাধীনতা লাভ করে।
এই ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
তাদের মতে, এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত হানতে পারে। তবে, ইউক্রেন সরকার জোর দিয়ে বলছে যে, এই পদক্ষেপ কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নয়, বরং আগ্রাসী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগের ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে, এই মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
যদি চার্চটি নিষিদ্ধ হয়, তবে এটি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস