ইউক্রেনে আবারও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, কিয়েভে ধ্বংসযজ্ঞ, বাড়ছে নিষেধাজ্ঞার দাবি।
যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি আলোচনার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার উপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। শনিবার ভোরে কিয়েভে চালানো এক ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় শহরটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
ইউক্রেনের সামরিক সূত্র অনুযায়ী, রাশিয়া কিয়েভে ২৫০টির বেশি ড্রোন এবং ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকটি আবাসিক ভবন ও একটি শপিং মল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। শুধু কিয়েভ নয়, ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক, ওডেসা এবং জাপোরিঝিয়ার মতো ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলেও হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে ৬টি এবং প্রায় ২৫০টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই ছিল ইরানের তৈরি।
খারকিভের আঞ্চলিক প্রধান ওলেহ সিনেহুবভ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই অঞ্চলে রাশিয়ার একাধিক হামলায় ৪ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শনিবার ভোরে রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর চেষ্টা করা অন্তত ১০০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে বেলগোরোদ অঞ্চলে ৬৪টি এবং আরও ১০টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া, কুর্স্ক, লিপেতস্ক এবং ভোরোনেজ অঞ্চলের উপর দিয়ে যাওয়া আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং মস্কোর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত টিভিয়ের উপরে ৫টি ড্রোনকে তারা আকাশেই ধ্বংস করেছে।
সাম্প্রতিক এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে, বেলারুশ সীমান্তের কাছে উভয় পক্ষ তাদের সৈন্যদের এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে বন্দী বিনিময় করে। এই বিনিময়ে উভয় পক্ষই ২৭০ জন সেনা ও ১২০ জন সাধারণ নাগরিককে মুক্তি দেয়। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় বন্দী-বিনিময়। জানা গেছে, উভয় দেশ ১০০০ জন বন্দীকে বিনিময়ের জন্য রাজি হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই আরও বন্দী-বিনিময়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, দেশের জন্য এটি আরেকটি কঠিন রাত ছিল। তিনি মনে করেন, বিশ্বের এখন বোঝা উচিত যে, ‘এই যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হলো মস্কো’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে ফল পেতে এবং সত্যিকারের কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করতে বাধ্য করতে আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করতে চাই। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং আমাদের সকল মিত্রদের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার অপেক্ষায় আছি। রাশিয়ার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর উপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে, তবেই মস্কো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে।’
এদিকে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ শুক্রবার রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে ব্যর্থ হলে, দেশটির উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে হওয়া আলোচনার এক সপ্তাহ পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিহা বলেছেন, মস্কো এখনো পর্যন্ত কোনো ‘শান্তি স্মারক’ পাঠায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘এর পরিবর্তে রাশিয়া বেসামরিক নাগরিকদের উপর মারাত্মক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। শান্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়ানো দরকার।’
কিয়েভ থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি জন হেনড্রেন জানিয়েছেন, ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনাটি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য হতাশাজনক ছিল, কারণ তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনাটি ছিল অনেক নিচু পর্যায়ের, তবে তাঁরা বন্দী-বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বিনিময় সম্ভবত রবিবার শেষ হতে পারে, তবে বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন। ইউরোপ নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাজি হয়েছে, তবে ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।’
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।