ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, শান্তি আলোচনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ইউরোপ। এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ-কামনা কতটা, তা সরাসরি যাচাই করা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বাধ্য করা।
খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, উভয় পক্ষকে কোনো রকম আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো, যেমন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ড – এই প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন।
ইউরোপীয় নেতাদের এই পদক্ষেপের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেনকে সরাসরি সহায়তা করার বিষয়ে তাদের আগ্রহ হারাতে পারে। এমনটা হলে, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক হতে পারে।
ইউরোপ চাইছে, ট্রাম্প প্রশাসন যেন এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো পক্ষ চুক্তি ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একে ‘ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে’ – এমন উত্তর যথেষ্ট নয়। তাদের হয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে হবে, না হয় সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
অতীতে দেখা গেছে, রাশিয়া প্রায়ই জটিল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা হয়তো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে, কিন্তু পরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে। অথবা, তারা প্রস্তাবের কিছু অংশ মেনে নিতে পারে, যেমন রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চলে সীমিত আকারে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।
এমন পরিস্থিতিতে, হোয়াইট হাউসের জন্য রাশিয়ার এই দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া কঠিন হবে।
এই প্রস্তাবের একটি বড় দিক হলো, এর মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধ-কামনা এবং শান্তির প্রতি তাদের আগ্রহের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, পুতিন সম্ভবত শান্তি চান না এবং তিনি সম্ভবত এই প্রস্তাবকে গ্রহণ করবেন না।
যদি তাই হয়, তবে এর ফলস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে রাজি করানো যেতে পারে।
এই প্রস্তাবের বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রস্তুত হতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়, তবে তাদের সেই সক্ষমতা আছে কিনা, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কারণ, কয়েক’শ কিলোমিটার বিস্তৃত যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা সহজ নয়।
এই মুহূর্তে, ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুতিন সত্যিই শান্তি চান কিনা, তা নিশ্চিত করা। যদি তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়াতে পারে।
তবে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝানো, যিনি হয়তো এই বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন