যুদ্ধ: ইউক্রেনের সামরিক প্রধানকে সরানোর দাবি, বিস্ফোরক অভিযোগ সাবেক কমান্ডারের!

ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে নেতৃত্ব নিয়ে এবার গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন একজন সাবেক সামরিক কমান্ডার। দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওলেksান্ডার সিরস্কির বিরুদ্ধে কৌশলগত দুর্বলতা এবং সেনাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলার অভিযোগ এনেছেন তিনি।

এই অভিযোগের জেরে সিরস্কিকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানিয়েছেন আজভ ব্রিগেডের সাবেক চিফ অফ স্টাফ বোহদান ক্রোটভিচ।

ফেব্রুয়ারিতে আজভ ব্রিগেড থেকে পদত্যাগ করা ক্রোটভিচ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান সামরিক নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, জেনারেল সিরস্কি এবং অন্যান্য শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর সবকিছু ‘ম্যানুয়ালি মাইক্রো-ম্যানেজ’ করছেন।

সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি বিশ্রাম নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সেনাদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ক্রোটভিচ বলেন, এমন কিছু নির্দেশ তিনি পেয়েছেন যা ‘সীমান্ত-অপরাধমূলক’ এবং বিবেককে বাধা দেওয়ার কারণে তিনি তা মানতে পারেননি।

২০১৪ সাল থেকে আজভ ব্রিগেডে দায়িত্ব পালন করা ক্রোটভিচ, আজভস্টাল স্টিল ওয়ার্কসে রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি বন্দীও হয়েছিলেন।

বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসেন। কিন্তু সেনাদের জীবন নিয়ে কমান্ডারদের উদাসীনতা দেখে তিনি হতাশ হন।

ক্রোটভিচ জানান, সেনাদের এমন সব কাজ করতে বলা হচ্ছে যা সম্ভবত তারা নিজেরাও করতে চাইতেন না। তাই তিনি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

ক্রোটভিচের মতে, বর্তমান সামরিক কমান্ডাররা আধুনিক যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে অবগত নন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, রাশিয়ার এফপিভি ড্রোন এবং গ্লাইড বোমার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে।

কিন্তু ইউক্রেনের কমান্ডাররা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানসিকতা এখনো বিদ্যমান।

ক্রোটভিচ আরও অভিযোগ করেন, সেনাদের ফ্রন্ট লাইনের কাছে বিশ্রাম নিতে বাধ্য করার পেছনে জেনারেল সিরস্কির পুরনো একটি নির্দেশিকা কাজ করেছে, যা ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল।

সামরিক সদর

অফিসের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ক্রোটভিচ। তিনি জানান, রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রার কারণে আজভ ব্রিগেডের সদর দপ্তর সরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও, তাদের কথা শোনা হয়নি।

এর ফলস্বরূপ, তাদের সদর দফতর সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জেনারেল সিরস্কির কৌশলকে আক্রমণ করে ক্রোটভিচ বলেন, সিরস্কি শুধুমাত্র একটি দুর্বল স্থানে আঘাত হানার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে কৌশল প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও যোগ করেন, সিরস্কি হয় শত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বেশি সেনা পাঠাচ্ছেন, নয়তো সেনাদের জীবন বাঁচাতে পিছু হটছেন।

ক্রোটভিচের মতে, ইউক্রেনীয় বাহিনী বর্তমানে ক্রমাগত তাদের এলাকা হারাচ্ছে, কারণ তারা কৌশলগত যুদ্ধে সুবিধা করতে পারছে না। তিনি মনে করেন, সিরস্কি যুদ্ধের উচ্চ কৌশল প্রয়োগ করছেন না।

ক্রোটভিচ এখন ‘স্ট্রেটেজিক অপারেশনাল অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ (Soia) নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। এই সংস্থা রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া এবং ইউক্রেন-বিরোধী অন্যান্য দেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।

তবে তিনি রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। তার মূল লক্ষ্য হলো, রাশিয়াকে দুর্বল করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে আর যুদ্ধ করতে না পারে।

এ বিষয়ে ইউক্রেনীয় জেনারেল স্টাফের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও, তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *