আতঙ্কের ছবি! রাশিয়ার বিরুদ্ধে ড্রোন-দেয়াল বানাচ্ছে ইউক্রেন, কী আছে পরিকল্পনায়?

যুদ্ধ আরও তীব্র: ইউক্রেনে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন আক্রমণের প্রস্তুতি, ড্রোন প্রযুক্তির দৌড়

ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে, রাশিয়া তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করেছে। একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার তীব্রতা বেড়েছে, তেমনি স্থলভাগে বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইনেও তারা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এবং উত্তরে কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তারা।

তবে, পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে ইউক্রেনও ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার সৈন্যদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এখন কৌশল পরিবর্তন করে আকাশ থেকে শহরগুলো ধ্বংস করে এবং স্থলভাগে ইউক্রেনীয় সেনাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তারা ব্যাপক সংখ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরি করছে, যা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এর পাশাপাশি, রাশিয়ার সেনারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইনে, বিশেষ করে জাপোরিঝিয়া থেকে সুমি পর্যন্ত, ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভাঙার চেষ্টা করছে।

ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা সংস্থা, ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, চলতি বছর রাশিয়া প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।

এই হারে তারা যদি অগ্রসর হতে থাকে, তবে মস্কো কর্তৃক অবৈধভাবে যুক্ত করা চারটি অঞ্চলের (দনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন) পুরোটাই দখল করতে তাদের প্রায় চার বছর লেগে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাশিয়া সুমি অঞ্চলে প্রায় ৫০,০০০ সৈন্য জমায়েত করছে এবং তারা ১০ কিলোমিটার গভীরে একটি বাফার জোন তৈরি করতে চাইছে। তবে, তাদের সেই সক্ষমতা নেই।

যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউক্রেন ‘ড্রোন ওয়াল’ তৈরির চেষ্টা করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ড্রোন দিয়ে একটি প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করা, যা রাশিয়ার সৈন্যদের ব্যাপক ক্ষতি করবে। কিয়েভ তাদের নিজস্ব ড্রোন শিল্পকে আরও প্রসারিত করতে চাইছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০টি শাহেদ ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। জেলেনস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এমনও হতে পারে যে রাশিয়া একদিনে ১০০০ ড্রোন ব্যবহার করবে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদার করতে এফ-১৬ এবং মিরাজ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা শুরু করেছে এবং ড্রোন-বিধ্বংসী ড্রোন তৈরি করার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনের প্রাক্তন সামরিক প্রধান ভ্যালেরি জ়ালুঝনি বলেছেন, টিকে থাকার জন্য ইউক্রেনকে একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধ করতে হবে, যেখানে ড্রোনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রাশিয়ার উপর যুদ্ধের অর্থনৈতিক বোঝা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।

তবে, যুদ্ধের ময়দানে জনবল এবং সরঞ্জামের দিক থেকে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রতি মাসে প্রায় ৬০,০০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছে। যদিও এই সংখ্যাটি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবুও রাশিয়ার সেনাদের বেতন ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী হচ্ছে।

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার প্রতিটি সাফল্যের বিপরীতে তারা প্রায় ১০০ জন সৈন্য হারাচ্ছে।

বর্তমানে, ইউক্রেনীয় সামরিক কমান্ডারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা কোন এলাকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন, কোথায় সেনা প্রত্যাহার করা উচিত এবং কীভাবে পুনরায় সৈন্যদের মোতায়েন করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

কারণ, রাশিয়ার আক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল তাদের কাছে পর্যাপ্ত নয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *