যুদ্ধ জয়ের আশায় ইউক্রেন! জার্মানির কোন ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে তাকিয়ে?

জার্মানির তৈরি ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র, যা চাইছে ইউক্রেন : যুদ্ধের মোড় ঘোরাবে?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আবহে জার্মানির তৈরি অত্যাধুনিক ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চলছে আলোচনা। ইউক্রেন চাইছে এই ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাদের সামরিক শক্তি আরও বাড়াতে সহায়ক হবে।

সম্প্রতি জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বার্লিনে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের পরেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্ন উঠেছে, কী এই ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র? কেনই বা এটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

আসলে, ‘টরস’ হলো জার্মান-সুইডিশ প্রযুক্তিতে তৈরি একটি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ১৯৯৮ সালে জার্মান ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমবিডিএ ডয়চল্যান্ড এবং সুইডেনের সাব বোফর্স ডাইনামিক্স যৌথভাবে এটি তৈরি করে।

শক্তিশালী বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। মাটির নিচে বা সুরক্ষিত বাঙ্কারে থাকা কোনো লক্ষ্যবস্তুতেও এটি আঘাত হানতে পারে। এমনকি জিপিএস (GPS) সহায়তা ছাড়াই এটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে।

ইউক্রেন ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে।

তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র পেলে ইউক্রেনের আক্রমণের ক্ষমতা অনেক বাড়বে। কারণ, অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে ‘টরস’-এর পাল্লা বেশি এবং এটি অনেক বেশি গোলাবারুদ বহন করতে পারে।

জার্মানি ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান সামরিক সহযোগী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরেই সামরিক সাহায্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ।

তবে অতীতে জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে দ্বিধা বোধ করেছিলেন।

কারণ, তিনি সরাসরিভাবে এই যুদ্ধে জার্মানির জড়িত হওয়াটা এড়িয়ে যেতে চাইতেন। যদিও পরে তিনি ইউক্রেনকে ‘লেপার্ড ২’ ট্যাংক সরবরাহ করতে রাজি হয়েছিলেন।

বর্তমানে ফ্রিডরিখ মেরজের নেতৃত্বে জার্মানির নতুন সরকার ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, ইউক্রেনকে তাদের ভূখণ্ডেই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে জার্মানি সহায়তা করতে পারে। যদিও ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তারা এটিকে সরাসরি যুদ্ধের শামিল হিসেবে দেখবে। এমনকি এর ফলস্বরূপ পারমাণবিক হামলা হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।

অন্যদিকে, মেরজের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, জার্মানির এমন সিদ্ধান্ত ‘সরাসরি’ যুদ্ধের শামিল হবে।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, জার্মানি যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জার্মানি যদি শেষ পর্যন্ত ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নাও করে, ইউক্রেনকে তাদের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করার সিদ্ধান্তও গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, এটি ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তবে অনেকেই মনে করেন, এই মুহূর্তে ‘টরস’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হলে যুদ্ধের মোড় ঘোরানো হয়তো সম্ভব হবে না।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *