ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ১৫ জন নিহত, আহত ১৩১।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতের এই হামলায় আহত হয়েছেন ১৩১ জন।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানার কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।
কিয়েভ সিটি সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর ткаচেঙ্কো জানান, রাজধানী কিয়েভে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে চলা হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি ৯ তলা আবাসিক ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, এতে বহু ফ্ল্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া ৪৪০টির বেশি ড্রোন এবং ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
তিনি কিয়েভ আক্রমণকে রাজধানী শহরের ওপর চালানো ‘সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতগুলোর একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিশকো জানান, হামলায় ১১০ জনের বেশি আহত হয়েছেন এবং বুধবার শহরে শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি ছিল কিয়েভের ওপর চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি।
শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরেই এই হামলা চালানো হয়।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অভিযান জোরদারের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত ১২,০০০ এর বেশি ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
যদিও রাশিয়া বরাবরই সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার কথা বলে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে কিয়েভ কতটা সহায়তা পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সাহায্য চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কানাডায় সাক্ষাতের কথা ছিল, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাম্প দ্রুত ওয়াশিংটনে ফিরে যান।
এদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেছেন, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যে রাশিয়ার এই হামলা প্রমাণ করে যে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের প্রতি ‘পূর্ণ অশ্রদ্ধা’ দেখাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া কেবল যুদ্ধ বন্ধ করতে অথবা সংকট সমাধানের জন্য আলোচনা করতে রাজি নয়, বরং কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করার ভান করে ইউক্রেনের রাজধানীতে আঘাত হানছে।”
পাল্টা জবাবে ইউক্রেনীয় বাহিনীও নিজেদের তৈরি দূরপাল্লার ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাদের দেশের ১০টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়া ২০৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ‘রসাভিয়াৎসিয়া’ জানিয়েছে, মস্কোর চারটি বিমানবন্দরসহ কালুগা, তাম্বভ এবং নিজনি নভগোরোদের বিমানবন্দরগুলোতেও উড়োজাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে, ওডেসায় ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে।
আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেহ কিপার জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন বলেই’ এই ধরনের হামলা চালাচ্ছেন।
কিয়েভ সিটি সামরিক প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় আবাসিক ভবনগুলোতে সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে।
এতে বহু মানুষের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে।
এক মার্কিন নাগরিকও এই হামলায় মারা গেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস