ইউক্রেনীয় একটি স্টার্টআপ, যারা রাশিয়াকে প্রতিরোধের জন্য দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রত্যাশিত সামরিক সহায়তা সেভাবে না পাওয়ায়, দেশটি এখন নিজেদের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনীয় একটি স্টার্টআপ দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে রাশিয়াকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ফায়ার পয়েন্ট নামের এই স্টার্টআপটি দূরপাল্লার ড্রোন তৈরি করছে, যা এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার (৯৯৪ মাইল) পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। গত বছর সেপ্টেম্বরে, এই ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার একটি সামরিক অস্ত্রের ভাণ্ডারে হামলা চালানো হয়, যা কিয়েভের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা প্রমাণ করে।
এছাড়া, তারা ৩,০০০ কিলোমিটার (১,৮৬৪ মাইল) পাল্লার একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা বছরের শেষ নাগাদ ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফায়ার পয়েন্টের প্রধান নির্বাহী ইরিনা তেরেখ জানান, বর্তমানে আকাশ পথে যুদ্ধ করাই তাদের প্রধান কৌশল। তাদের মতে, রাশিয়ার মতো জনবল বা অর্থের যোগান তাদের নেই।
তাই, যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকতে হলে নতুন কিছু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তাদের তৈরি করা ড্রোনগুলো রাশিয়ার সামরিক স্থাপনা, তেল শোধনাগার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখন প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র তৈরি করছেন। তাদের মতে, এই শিল্পের আরও অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে এবং ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে তারা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর, ইউক্রেনের অনেক প্রতিরক্ষা কোম্পানি তৈরি হয়েছে। ফায়ার পয়েন্ট তেমনই একটি।
শুরুতে তারা ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোনের মতো ভয়ঙ্কর কিছু তৈরি করতে চেয়েছিল। এরপর, নির্মাণ, গেম ডিজাইন এবং স্থাপত্যের জ্ঞান একত্রিত করে তারা এমন এক ধরনের ড্রোন তৈরি করেছে, যা প্রচলিত অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি দূর পর্যন্ত উড়তে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ফায়ার পয়েন্টের তৈরি করা এফপি-১ ড্রোন দেখতে সাধারণ হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা অসাধারণ। এই ড্রোনগুলো ৬০ কিলোগ্রাম (১৩২ পাউন্ড) বিস্ফোরক বহন করতে পারে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে হওয়া অনেক হামলায় এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
এসব হামলায় তেল শোধনাগার ও অস্ত্রের ভাণ্ডারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা রাশিয়ার অগ্রযাত্রাকে ধীর করেছে।
ইউক্রেন এখন কার্যত প্রতিরক্ষা শিল্পের ‘সিলিকন ভ্যালি’-তে পরিণত হয়েছে। দেশটির সরকার নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করছে এবং স্টার্টআপগুলোর জন্য নিয়মকানুন সহজ করে দিয়েছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা এখন মেটালার্জি, নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
যুদ্ধের কারণে তারা দ্রুত তাদের ধারণাগুলো পরীক্ষা করতে পারছে এবং রাশিয়ার কৌশল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে।
ফায়ার পয়েন্ট তাদের তৈরি করা ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দিয়েছে ‘ফ্লেমিঙ্গো’। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৩,০০০ কিলোমিটার (১,৮৬৪ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এর নির্ভুলতা ১৪ মিটারের মধ্যে।
বর্তমানে তারা প্রতিদিন একটি করে ‘ফ্লেমিঙ্গো’ তৈরি করছে এবং অক্টোবরের মধ্যে প্রতিদিন সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছে।
ইরিনা তেরেখের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত হচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস