ইউক্রেনে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে শনিবার পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভ এবং ডিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে এই হামলা চালানো হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে জরুরি ভিত্তিতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছেন।
শনিবার ভোরে কিয়েভে চালানো একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুজন নিহত হয় এবং নয়জন আহত হয়েছে। কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টিমুর ткаচেঙ্কো এই তথ্য জানিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি আবাসিক নয় এমন ভবনে আগুন ধরে যায়।
এছাড়া, অন্য একটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে, যা কাছাকাছি ভবনের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বিভাগের পক্ষ থেকে টেলিগ্রামে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো হামলার সময় টেলিগ্রামে লেখেন, “রাজধানীতে বিস্ফোরণ হয়েছে। শহরটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।”
ডিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে রুশ হামলায় দুইজন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছে। অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ভ্লাদিস্লাভ হাইভানেঙ্কো জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আবাসিক ভবন ও ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৬২টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৫০টি ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের ১২১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই ধরনের হামলার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বিশেষ করে ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের হামলা থেকে শহরগুলোকে রক্ষা করার জন্য ‘প্যাট্রিয়ট’ খুবই জরুরি।
জেলেনস্কি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জি-৭ দেশগুলো এই ধরনের হামলা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য সহায়তা করতে পারে।” তিনি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২৫টি ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চেয়েছেন, যা শহরগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করবে।
শুক্রবার জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রাশিয়ার তেল খাতের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছেন।
বর্তমানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে।
সম্প্রতি লন্ডনে দুই ডজনের বেশি ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন জেলেনস্কি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বৈঠকে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং ইউক্রেনকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।