যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রী পর্যায়ের শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আলোচনার শুরুতে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে তাতে রাজি হননি দেশটির প্রভাবশালী সিনেটর মার্কো রুবিও।
ফলে, বৈঠকটি এখন নিম্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বুধবার (গতকাল) এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা। তবে, আলোচনার আগেই বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে রাশিয়া তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে চাইছে।
বৈঠক বাতিলের কারণ হিসেবে জানা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র আকস্মিক অনীহা। এর পাশাপাশি, ক্রেমলিন থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ন্যাটো দেশগুলোর ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে এখনো তাদের আপত্তি রয়েছে।
তবে, আলোচনার গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউক্রেন একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। এই দলে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীও।
ইয়ারমাক বলেন, “সবকিছু সত্ত্বেও, আমরা শান্তির জন্য কাজ করব।
এদিকে, যুদ্ধের ময়দানেও চলছে ধ্বংসলীলা। মারহানেটস শহরে রুশ ড্রোন হামলায় নয়জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একদিনে দেশটির উপর ১৩৪টি বড় আকারের ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার এই আলোচনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। এই বৈঠকে ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধি দলেরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে, মার্কো রুবিও’র পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলোচনায় যোগ দেন কেইথ কেলগ।
আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলাদাভাবে চলা গোপন আলোচনা। বিভিন্ন সূত্রে খবর, রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের উপর থেকে তাদের দাবি ত্যাগ করতে রাজি হতে পারে, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে।
তবে, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী তিন দিনের মধ্যে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে, পুতিনের পক্ষ থেকে আরও কিছু শর্ত দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার দেশ ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারবে না।
এই পরিস্থিতিতে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স একটি ৩০-জাতি “আশ্বাস বাহিনী” ইউক্রেনে মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির পরে শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হবে। তবে, রাশিয়া অতীতে এই ধরনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শান্তি আলোচনা বানচাল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের খবর ছড়ানো হচ্ছে। আলোচনার পরিবর্তে, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সরাসরি আলোচনাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। তারা জানায়, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ঘোষিত ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যত মানা হয়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান