যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে আলোচনা!

ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে লন্ডনে মিলিত হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের সামরিক কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে একটি আংশিক যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ‘ইচ্ছুক জোটের’ এই পরিকল্পনাকে ‘কার্যকরী পর্যায়ে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। তবে কতটি দেশ সেনা পাঠাতে রাজি, কিংবা যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশই একটি সীমিত যুদ্ধবিরতিতে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এটি কবে নাগাদ কার্যকর হবে এবং কোন বিষয়গুলো আক্রমণের আওতার বাইরে থাকবে, সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের আংশিক অবসানের লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের পূর্ণাঙ্গ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উভয়পক্ষের জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু না করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

আলোচনা সত্ত্বেও, উভয় পক্ষ থেকে রাতের বেলা শত শত ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে এবং অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া ১৭1 টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে তারা ৭৫টি ভূপাতিত করেছে।

এছাড়া, ৬৩টি ভুয়া ড্রোন রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, সম্ভবত সেগুলোকে অকার্যকর করা হয়েছিল। অন্যদিকে, রাশিয়া তাদের অঞ্চলের ৬টি স্থানে এবং ক্রিমিয়াতে ১৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করেছে।

যদি ইউক্রেনে শান্তি ফিরে আসে, তবে সেই শান্তি রক্ষায় কত সংখ্যক সেনা দরকার হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কর্মকর্তাদের মতে, এই শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ এর মধ্যে হতে পারে।

এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সেনা পাঠাতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশ বিভিন্নভাবে এতে জড়িত থাকতে চায়।

শনিবার এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রায় ৩০ জন নেতা আলোচনায় অংশ নেন, যেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা এবং ন্যাটোর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাশিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তারা ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটোর কোনো সেনা মোতায়েন মেনে নেবে না। অন্যদিকে, ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত দেননি যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় রিজার্ভ শক্তি হিসেবে কোনো সহায়তা দেবে।

স্টারমারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এই পরিকল্পনা সফল হবে না। তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *