যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার বন্দীশিবির থেকে মুক্তি পাওয়া সেনারা কিভাবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন, সেই গল্প শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।
কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে আসা এই যোদ্ধাদের জীবনে মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুনর্বাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।
যুদ্ধবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন ইউক্রেনের সেনারা।
রাশিয়ার বন্দীশিবিরে কাটানো বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি এখনো তাদের তাড়া করে ফেরে।
শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি গভীর মানসিক আঘাত নিয়ে তারা ফিরছেন, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অনেক বন্দী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা তাদের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
২৫ বছর বয়সী স্তানিস্লাভ তারনাভস্কি তেমনই একজন, যিনি মারিউপোলের যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন।
মুক্তির পর তিনি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছেন।
এরই মধ্যে তিনি প্রেমিকা তেতিয়ানা বাইয়েভার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং একটি গোল্ডেন রিট্রিভারও পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু বন্দী অবস্থায় কাটানো বিভীষিকাময় দিনগুলো তাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।
বন্দীশিবিরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি এখনো সেই কর্মকর্তাদের দেখি, যারা আমাদের ওপর নজর রাখত। ঘুমের মধ্যে তাদের দেখি, তারা আমাকে মারতে চাইছে।”
তিনি কিয়েভের উপকণ্ঠে বসবাস করেন, কারণ রাশিয়ার সেনারা তার শহর বেরদিয়ানস্ক দখল করে নিয়েছে।
যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়ার সাথে সাথে, প্রাক্তন যুদ্ধবন্দীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মনোবিদদের পরামর্শের পাশাপাশি পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
যুদ্ধবন্দীদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুক্তি পাওয়ার কয়েক বছর পরও তাদের উপর নজর রাখা প্রয়োজন, কারণ যুদ্ধের ক্ষত অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
২১ বছর বয়সী ডেনিস জালিজকো, যিনি ১৫ মাস বন্দী ছিলেন, তিনিও এই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
বন্দী অবস্থায় তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
মুক্তির পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও, মনের গভীর ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি।
সংগীত এবং শরীরচর্চা তাকে মানসিক শান্তি এনে দেয়।
তিনি জানান, “আমি এখন আর মৃত্যুকে ভয় পাই না।”
যুদ্ধবন্দীদের পরিবারগুলোর জন্যেও এই পরিস্থিতি বেশ কঠিন।
মনোবিদেরা তাদের সন্তানদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছেন এবং তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডেনিসের মা মারিয়া জালিজকো বলেন, “আমি তাকে আগের মতো স্বাভাবিক দেখতে পাই না।
তার চোখে এখনো সেই কষ্টের ছাপ।” ডেনিস এখন শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, সঙ্গীতই পারে তাকে এই দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি দিতে।
যুদ্ধবন্দীদের পুনর্বাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক সুস্থতা এবং সামাজিক সমর্থন অপরিহার্য।
তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস