ভয়াবহ বোমা হামলায় কাঁপছে ইউক্রেন! শান্তি প্রস্তাবের মাঝে কী ঘটবে?

ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন করে বিমান হামলা, শান্তি প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেন জানিয়েছে, ইস্টার বিরতি শেষ হওয়ার পর রাশিয়া আবারও তাদের ওপর মারাত্মক বিমান হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যেই কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শান্তি প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

খেরসন অঞ্চলের আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিন জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সোমবার ভোরে কাছের বন্দর নগরী মাইকোলাইভেও বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ওলেক্সান্ডার সেনকেভিচ। পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি অঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, “বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।” তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

এদিকে, পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ভাদিম ফিলাশকিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডাকা ইস্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই হামলাগুলো চালানো হয়। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।

এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে।

সিএনএনকে দেওয়া একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্যারিসে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কিয়েভ এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে পেশ করা প্রস্তাবের একটি অংশে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। ২০১৪ সালে মস্কো ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে এক দশকেরও বেশি সময়ের নীতিতে পরিবর্তন আসবে।

ওই সূত্রটি আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের মধ্যে যুদ্ধফ্রন্টের দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চালুর বিষয়টিও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন, যদি শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি দেখা না যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দিনের মধ্যেই এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার এক পোস্টে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন “এই সপ্তাহে একটি চুক্তি করতে পারে”। তবে তিনি কী ধরনের চুক্তি হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত আলোচনা থেকে পুরোপুরি সরে আসার জন্য প্রস্তুত কিনা অথবা আলোচনা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

শুক্রবার সিএনএনকে দেওয়া সূত্রটি জানিয়েছে, প্রস্তাবনার কাঠামো এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছে এবং চলতি সপ্তাহে লন্ডনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোকে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের আরেকটি বৈঠকের পরিকল্পনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে কিয়েভ বা মস্কো থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চলতি সপ্তাহে লন্ডন শহরে মার্কিন, ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে রাজি হতে ইচ্ছুক। তবে গত মাসে তিনি বলেছিলেন, তার সরকার কোনো অধিকৃত অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না এবং এটিকে তিনি ‘রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *