সৌদি আরবে আগামী সপ্তাহে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। এই বৈঠকে মধ্যস্থতা করবে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত, কৃষ্ণ সাগরের নিরাপত্তা এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সোমবার রিয়াদে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা একপক্ষে এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অন্যপক্ষে থাকবেন। একে ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, যেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা দুই পক্ষের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলবেন।
বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির ফেডারেশন কাউন্সিলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান গ্রিগরি কারাসিন এবং ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) পরিচালক উপদেষ্টা সের্গেই বেসেদা। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলও উপস্থিত থাকবে।
এই বৈঠকের আগে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘কৃষ্ণ সাগর চুক্তি’। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, দুই নেতা কৃষ্ণ সাগরে নৌ চলাচল বন্ধ করা, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছেন।
আলোচনায় জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রাথমিকভাবে বৃহত্তর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, এখন তিনি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে চান, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও বেসামরিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না। উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রটি ইউক্রেনের বিদ্যুতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল।
অন্যদিকে, ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্প তাঁদের ফোনালাপে বিষয়টি উত্থাপন করেননি। রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃত।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের তত্ত্বাবধানে লন্ডনে পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও এই বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া এই ধরনের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
ইউরোপে রাশিয়ার বিরোধী মনোভাব প্রসঙ্গে রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগু বলেন, এই ধরনের মন্তব্য বর্তমান ইউরোপের রাশিয়া-বিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউরোপকে ‘যুদ্ধবাজ’ হিসেবেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। জার্মানির প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং দেশটির রাশিয়াকে ‘আগ্রাসী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করার সমালোচনা করে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে যোগ দেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের আপত্তির কারণে সম্মেলনে ইউক্রেনকে সমর্থন করে একটি যৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি ইইউ। জেলেনস্কি হাঙ্গেরির এই পদক্ষেপকে ‘ইউরোপ-বিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ইউক্রেনের জন্য ৫ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা) সামরিক সহায়তা এবং রাশিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা