ডনেটস্কে রাশিয়ার আক্রমণের তীব্রতা, ইউক্রেনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। পূর্ব ইউক্রেনের ডনেটস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অভিযান জোরদারের ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্প-সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি পুনরুদ্ধারের জন্য রাশিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছে। শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে এই লড়াই আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ডনেটস্ক অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন চারটি প্রধান শহরের একটি “দুর্গ” তৈরি করে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে।
এই শহরগুলো হলো—স্লোভিয়ানস্ক, লাইমান, এবং কোস্তান্তিনিভকা। কিন্তু সৈন্য ও সরঞ্জামের অভাব এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে রুশ বাহিনীর আক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া সম্ভবত বড় শহরগুলোতে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলছে, যেমনটা তারা বাখমুতের ক্ষেত্রে করেছিল। বাখমুতের যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া এখন কৌশল পরিবর্তন করে শহরের বাইরে থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা ইউক্রেনীয় সেনাদের দুর্বল করতে ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করছে এবং সরবরাহ পথগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
কর্নেল পাভলো ইয়ারচুক জানিয়েছেন, রাশিয়া এখন কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের ফাঁক গলে প্রবেশ করছে। তবে এই পদ্ধতিতে খুব বেশি সুবিধা করা যাচ্ছে না।
কারণ এতে সেনাদের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচ জন সেনার একটি দল পাঠানো হলে, তাদের মধ্যে সাধারণত দুইজন নিহত হয়, একজন আহত হয় এবং একজন নিখোঁজ হয়।
কেবল একজন কোনোমতে ড্রোন ব্যবহার করে সাহায্য চাইতে পারে।
ডনেটস্কের উত্তরে লাইমান শহরটি কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের পতন হলে রাশিয়ার সেনারা আরও সহজে স্লোভিয়ানস্কে প্রবেশ করতে পারবে।
লাইমানের আশেপাশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, শক্তিশালী অবকাঠামো এবং অসংখ্য বাঙ্কার রয়েছে, যা রাশিয়াকে সেনা সমাবেশ ও সরঞ্জাম মজুদের সুযোগ করে দেবে।
অন্যদিকে, ডনেটস্কের দক্ষিণে, রাশিয়া কোস্তান্তিনিভকা শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অঞ্চলের পতন হলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে।
তবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো জনবল সংকট। সৈন্যদের ক্লান্তি এবং নিয়মিত বিরতিতে তাদের পরিবর্তনের অভাব প্রতিরোধের দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই অবস্থায় টিকে থাকার জন্য ইউক্রেনকে প্রযুক্তি, জনবল এবং শত্রুর দুর্বলতার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই আক্রমণ বেশি দিন চললে ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যদি দ্রুত কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে রাশিয়ার সামরিক শক্তির কাছে ইউক্রেনকে হার মানতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (Associated Press) খবর অনুযায়ী, ডনেটস্ক অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায়, রাশিয়ার সেনারা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর যুদ্ধ বন্ধ করবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস