ইউক্রেনে আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার ভোরে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক নারী ও তার দুই শিশুকন্যাও রয়েছে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।
বুধবারের হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্তত আটটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে আঘাত হানা হয়। কিয়েভের আঞ্চলিক প্রধান মিকোলা কালাশনিক জানান, কিয়েভ অঞ্চলের একটি গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি বাড়িতে আগুন লেগে যায়।
এতে মা ও তার ৬ মাস ও ১২ বছর বয়সী দুই মেয়ের মৃত্যু হয়।
কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন শিশুও রয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও একটি কিন্ডারগার্টেনে ড্রোন হামলা চালানো হয়।
মেয়র ইগর তেরেখভ জানিয়েছেন, হামলার সময় শিশুরা স্কুলে ছিল। হামলায় একজন নিহত ও ছয়জন আহত হলেও কোনো শিশুর গুরুতর ক্ষতি হয়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, হামলার পর অনেক শিশু এখনো মানসিক আঘাতের শিকার। রাশিয়ার ছোড়া ৪০৫টি ড্রোন ও ২৮টি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল কিয়েভ।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টা এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর চেষ্টা করছেন, তবে তা এখনো সফল হয়নি।
মঙ্গলবার ট্রাম্প জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা স্থগিত করা হয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, এই শীর্ষ বৈঠকের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-কে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে এবং অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই কেবল রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া বর্তমানে সম্মুখ সমরের পরিবর্তে কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ব্রিটিশ-নির্মিত ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের একটি রাসায়নিক কারখানায় হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই কারখানাটি রাশিয়ার সামরিক ও শিল্প কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে বিস্ফোরক ও ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি তৈরি করা হয়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে যাওয়া ৩৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকার আটটি বিমানবন্দরে হামলার কারণে কিছু সময়ের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
বুধবার নরওয়েতে পৌঁছেছেন জেলেনস্কি। এরপর তিনি সুইডেনে যাবেন এবং সেখানে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার উপর আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার, ইউক্রেনকে সমর্থনকারী ৩৫টি দেশের জোট ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’-এর বৈঠক লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
এদিকে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিয়েভের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ড্রোন ধ্বংসাবশেষ আঘাত হানার পর আগুন ধরে যায় এবং ১৫ জন বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস