ভয়ংকর! যুদ্ধে ১০ লাখের বেশি রুশ সৈন্যের মৃত্যু: ইউক্রেন

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা হতাহতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে, এমনটাই দাবি করছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। কিয়েভ থেকে বৃহস্পতিবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে মস্কোর বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের দেওয়া এই তথ্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হিসাবের সঙ্গে মিলে যায়। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া তাদের পূর্ণমাত্রায় অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি সেনা হতাহতের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ সেনা নিহত হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে যদি ধরা হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (Center for Strategic and International Studies) জুন মাসের শুরুতে জানিয়েছিল, রাশিয়া সম্ভবত এই গ্রীষ্মের মধ্যেই ১০ লাখ হতাহতের মাইলফলক স্পর্শ করবে।

এটিকে তারা ‘ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যুদ্ধ শুরুর দিকে রাশিয়া তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খুব কমই তথ্য দিয়েছিল।

তখন তারা জানিয়েছিল, প্রায় ৬ হাজার সেনা নিহত হয়েছে। তবে ইউক্রেনও দাবি করেছে, তাদের সৈন্যদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের প্রায় ৪৫ হাজার ১০০ সেনা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার।

যুদ্ধ বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও, রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে এবং অনেকে আহত হচ্ছেন।

ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর মতে, রুশ বাহিনী গত রাতে ৬৩টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ২৮টি ভূপাতিত করা হয়েছে এবং ২১টিকে অকার্যকর করা হয়েছে।

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণ জোরদার হয়েছে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলে, যা রুশ বাহিনীর আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানে ১ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও ড্রোন হামলায় ১৮ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪ জন শিশু।

খারকিভের মেয়র ইগর তেরেখভ জানিয়েছেন, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিন্ডারগার্টেন এবং অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘খারকিভ টিকে আছে। মানুষজন বেঁচে আছে, এবং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়া ব্যাপক হারে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। সোমবার প্রায় ৫০০ ড্রোন এবং মঙ্গলবার রাতে ৩১৫টি ড্রোন ও ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি আলোচনার মধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্দী বিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষই গুরুতর আহত ও অসুস্থ বন্দীদের বিনিময় করেছে। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমাদের মানুষজন বাড়ি ফিরছে। তাদের সবার চিকিৎসা প্রয়োজন, এবং তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবে।’

অন্যদিকে, ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কিকে আলোচনার জন্য পাঠানোয় সমালোচনাও করেছেন।

জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস এক অপ্রত্যাশিত সফরে কিয়েভে পৌঁছেছেন। তিনি জানান, রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলাগুলো থেকে বোঝা যায়, মস্কো বর্তমানে শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী নয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *