যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে তরুণ প্রজন্মের সৈনিক হিসেবে যোগদানের এক নতুন চিত্র উঠে এসেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে তরুণরা।
সম্প্রতি সরকার নতুন একটি স্কিম ঘোষণা করেছে, যেখানে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই স্কিমের আওতায়, এক বছরের চুক্তিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে তারা প্রায় ১ কোটি ইউক্রেনীয় মুদ্রা (প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা) বোনাস হিসেবে পাবে।
এছাড়াও, তাদের জন্য রয়েছে ০% সুদে ঋণ এবং স্বল্পমেয়াদি চাকরির সুযোগ।
কিন্তু এত সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ এখনো এই স্কিমে নাম লেখাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে অনেকে যুদ্ধের ভয়াবহতা, পরিবারের চাপ এবং জীবন হারানোর আশঙ্কার কথা বলছেন।
সম্প্রতি ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কথা হয় ‘লুন্তিক’ নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণের সঙ্গে। লুন্তিক জানান, তিনি দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “যখন কোনো চোর আপনার ঘরে ঢুকে আপনার স্ত্রী বা পরিবারের ক্ষতি করতে চায়, তখন আপনি যেমন প্রতিরোধ করেন, ঠিক তেমনই আমি আমার দেশ রক্ষার জন্য লড়ছি।” লুন্তিকের ভাষায়, তিনি কোনো লুকোচুরি খেলতে আসেননি।
তিনি জানেন, এখানে জীবন হারানোর ঝুঁকি আছে।
লুন্তিকের মতো আরও অনেক তরুণ এই দলে নাম লিখিয়েছে। তাদের গড় বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
সাধারণত, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর গড় বয়স ৪০ থেকে ৫০ এর কোঠায়। তাই তরুণদের এই অংশগ্রহণ কিছুটা হলেও সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, রাশিয়ার বিশাল জনসংখ্যার কারণে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জনবল সংকট একটি বড় সমস্যা।
যুদ্ধ শুরুর আগে, সৈন্যদের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর। পরে তা কমিয়ে ২৫ করা হয়েছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ট্রাম্প প্রশাসনও চেয়েছিল এই বয়সসীমা আরও কমানো হোক।
আরেক তরুণ ভলোদিমির, যিনি ২২ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি আমার সন্তানেরা কোনো দিন জানতে চায়, যুদ্ধকালে আমি কি করেছি, তাহলে তাদের আমি জানাতে চাই যে, আমি আমার দেশ রক্ষা করেছি।”
ভলোদিমির জানান, প্রথমে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে দ্বিধা বোধ করছিলেন। কারণ, তার বন্ধুরা তাকে নিরুৎসাহিত করেছিল।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণরা বন্ধু এবং পরিবারের কাছ থেকে অনেক চাপ অনুভব করে। যুদ্ধের দীর্ঘ সময় তাদের মধ্যে জীবন হারানোর ভয় তৈরি করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, যুদ্ধে প্রায় ৪৬ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৯০ হাজার।
তবে, অনেক তরুণ যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চায়। তারা মনে করে, এটি তাদের টিকে থাকার একটি কৌশল।
বর্তমানে, তরুণ সৈন্যদের জুন মাস পর্যন্ত ফ্রন্টলাইনে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। লুন্তিক একটি গোয়েন্দা ইউনিটে কাজ করবেন এবং ভলোদিমিরকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদাতিক ইউনিটে নিয়োগ করা হতে পারে।
উভয়ই এক বছর পর ছুটি কাটিয়ে আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায়। তবে, লুন্তিকের মতে, “প্রথম কাজ হলো, টিকে থাকা।”
তথ্য সূত্র: The Guardian