যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপোরিঝঝিয়া: যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের প্রস্তাব, পরমাণু বিশেষজ্ঞদের কড়া জবাব!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে এবং এর সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে, কিভাবে এই কার্যক্রমটি বাস্তবে রূপ নেবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এক টেলিফোন আলাপে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে কেন্দ্রগুলো পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে। এমনকি, কেন্দ্রগুলোর মালিকানা পেলে তা অবকাঠামোর জন্য সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা হতে পারে।

তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “মালিকানার বিষয়ে আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো আলোচনা করিনি।” জেলেনস্কি স্পষ্ট করে জানান, জাপোরিঝিয়া অঞ্চলসহ ইউক্রেনের সকল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক রাষ্ট্র। তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কেন্দ্রটির আধুনিকীকরণ এবং মেরামতের জন্য বিনিয়োগ করতে চায়, তবে ইউক্রেন তা বিবেচনা করতে প্রস্তুত।

জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একসময় ইউক্রেনের মোট বিদ্যুতের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করত। বর্তমানে, এটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ান বাহিনী এটি দখল করে নেয়। বর্তমানে কেন্দ্রটি গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যা কেন্দ্রটির নিরাপদ পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, তা ড্রোন হামলা এবং গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, কাছেই অবস্থিত কাখোভকা বাঁধটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রটিকে শীতল করার জন্য প্রয়োজনীয় জলের সরবরাহও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা অত্যন্ত কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে, এখানে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, কেন্দ্রটি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে সেই একই প্রযুক্তি নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, প্রথমে এর আশেপাশে আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। তারপর বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এছাড়াও, কেন্দ্রটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত জনবল এবং উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বর্তমানে, জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রের ছয়টি চুল্লীই বন্ধ রয়েছে। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, আশেপাশে এখনো বিস্ফোরণ ঘটছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, এই কেন্দ্রের নিরাপদ পুনরুদ্ধার বিশ্ববাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের এতে একটি ভূমিকা থাকা উচিত, কারণ এটি তাদের ভূমি এবং তাদের কেন্দ্র।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে দুই বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *