জেলেনস্কির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ফুঁসছে ইউক্রেন! রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিতর্কিত একটি দুর্নীতিবিরোধী আইন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আইনটি নিয়ে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ।

একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই আইনের সমালোচনা করেছে।

মঙ্গলবার ইউক্রেনের পার্লামেন্ট, ‘রাদা’-য় পাস হওয়া একটি বিলের বিরুদ্ধে রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি বিতর্কিত এই বিলে ভেটো দেওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু তাদের দাবি অগ্রাহ্য করে জেলেনস্কি বুধবার সকালে বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা বুধবার রাতে কিয়েভের কেন্দ্রে পুনরায় সমাবেশের ডাক দেয়।

নতুন এই আইনে দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এর ফলে সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ক্ষমতা বাড়বে।

ইউক্রেনের ইইউতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা এবং রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে আসা কোটি কোটি ডলারের সহায়তা টিকিয়ে রাখতে দুর্নীতি নির্মূল করা অত্যন্ত জরুরি।

বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, প্রেসিডেন্ট যেন বিলে স্বাক্ষর না করেন। কিন্তু যুদ্ধের এই কঠিন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি সেই পথে হাঁটেননি।

বরং তিনি এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন, যা অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।

জেলেনস্কি জানান, এই আইন দুর্নীতিবিরোধী লড়াই থেকে ‘রুশ প্রভাব’ দূর করবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।

তার মতে, বিপুল পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি মামলার বিচার বছরের পর বছর ধরে ঝুলে ছিল।

তিনি আরও বলেন, “এটাই ইউক্রেনের আসল প্রয়োজন। যে মামলাগুলো এতদিন ধরে ধামাচাপা ছিল, সেগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।”

তবে তিনি ঠিক কী ধরনের রুশ হস্তক্ষেপের কথা বলছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জেলেনস্কির এই পদক্ষেপ নিয়ে ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন।

তিনি রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগকে হাস্যকর বলেও উল্লেখ করেন।

এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইকে দুর্বল করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণ কমিশনার মার্তা কোস এক টুইট বার্তায় একে ‘গুরুতর পশ্চাদগমন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর ইউক্রেন শাখা এই পদক্ষেপকে ২০১৪ সালের ‘সম্মানের বিপ্লব’-এর পর হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোর পরিপন্থী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার শামিল বলে মন্তব্য করেছে।

বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

২০২২ সালে যুদ্ধে পা হারানো ওলেহ সিমোরোজ নামের এক ব্যক্তি বলেন, “যারা আইন ও সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিল, তারা এখন তাদের অভ্যন্তরীণ মহলের সুরক্ষায় ব্যস্ত, এমনকি ইউক্রেনীয় গণতন্ত্রের ক্ষতি করেও।”

বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ নিঃসন্দেহে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *