যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে, রুশ সেনাদের হাতে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের হত্যার একটি ভিডিও নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এই ভিডিওতে দেখা যায়, আত্মসমর্পণ করা নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় সৈন্যদের গুলি করে হত্যা করছে রুশ সেনারা। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের গুরুতর দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ভিডিওটি যাচাই করে দেখা গেছে, গত ১৩ই মার্চ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পিয়াতিকহাতকি গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর একটি ড্রোন থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, রুশ সেনারা চারজন ইউক্রেনীয় সেনাকে ধরে তাদের তল্লাশি করছে। এরপর তাদের মধ্যে একজন রুশ সেনা খুব কাছ থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করে। ঘটনার এই নৃশংস চিত্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে নাড়া দিয়েছে।
অন্যদিকে, রুশ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করলে তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আচরণ করা হয়। তবে, রাশিয়া সরকার এখনো পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, তারা এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করছে এবং এর তদন্ত চলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক দলও জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার ওপর গভীর নজর রাখছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। লন্ডন ভিত্তিক একটি সংস্থা সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্সের (Center for Information Resilience) মতে, ভিডিওটিতে যা দেখা যাচ্ছে, তা কোনো স্বাভাবিক যুদ্ধ পরিস্থিতি নয়, বরং এটি একটি বেআইনি কাজ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ড্যানিয়েল বেল বলেছেন, যুদ্ধবন্দীদের নির্বিচারে হত্যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধ।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, অন্তত ২৫০ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে রুশ সেনারা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা যুদ্ধাপরাধের ১,৫৭,০০০ এর বেশি ঘটনার নিবন্ধন করেছে। এই পরিস্থিতিতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
তবে, এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ইউক্রেনকে সমর্থনকারী দেশগুলোর মধ্যে নীতিগত পরিবর্তনের সম্ভবনা দেখা দিলে, তা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস