যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের আশঙ্কায় তাদের ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
‘ইউনাইটিং ফর ইউক্রেন’ (U4U) প্রোগ্রামের অধীনে আসা প্রায় দুই লাখ আশি হাজার শরণার্থীর জীবন এখন অনিশ্চয়তার দিকে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, যদি তাদের আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহর ও অঙ্গরাজ্যে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। সাউথ ক্যারোলাইনার হার্টসভিলে বসবাসকারী সাশা (আসল নাম ব্যবহার করা হয়নি) তেমনই একজন।
তিনি জানান, “যুক্তরাষ্ট্র আমার কাছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সুযোগের এক দুর্গ ছিল। আমি ভেবেছিলাম, অবশেষে এমন একটি জায়গায় এসেছি, যেখানে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারব।” কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের কারণে এখন তাদের সেই স্বপ্ন হুমকির মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘ইউনাইটিং ফর ইউক্রেন’ প্রোগ্রামের অধীনে আসা শরণার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণে প্রশাসনিক স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, কোনো প্রকার জালিয়াতি, জন নিরাপত্তা বা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডে উইট শহরে বসবাসকারী লিয়ানা অ্যাভেতিসিয়ান এবং আলিনা মিরজোয়ানের পরিবারও এই অনিশ্চয়তার শিকার। তারা অভিবাসন প্রক্রিয়ার জন্য কয়েক হাজার ডলার খরচ করেছেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (TPS) মেলেনি।
তাদের আশ্রয়দাতা অ্যাঞ্জেলা বোয়েলেন্স জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “এই সম্প্রদায়ের মানুষজন হতাশায় ভুগছেন। আমরা জানি না, এখানকার বাড়িগুলোর কি হবে, মূল্যবান কর্মীদের হারানো ব্যবসায়ীরা কি করবেন, স্কুলের শিশুরা কাঁদছে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য স্থানীয়ভাবে একজন পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে হয়েছে।”
বোয়েলেন্স আরও জানান, শরণার্থীদের জন্য তারা প্রায় পাঁচ লাখ ডলার সংগ্রহ করে ট্রানজিশনাল হোম তৈরি করেছিলেন। তাদের অনেকে ইতিমধ্যে নিজেদের বাড়িও কিনেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী স্যাম হির, যিনি অ্যাভেতিসিয়ান ও মিরজোয়ানেরসহ চারজন ইউক্রেনীয়কে কাজ দেন, বলেছেন, তাদের চলে যেতে হলে “খুব খারাপ লাগবে”।
তিনি তাদের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তবে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন। হির বলেন, “তারা আমাদের সমাজের জন্য মূল্যবান সম্পদ, তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারা শিখতে চায় এবং পরিবারের জন্য উপার্জন করতে চায়।”
হার্টসভিলে বসবাসকারী কার্টিস লি জানান, ইউক্রেনীয়রা তাদের সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “তাদের চলে যেতে হলে আমাদের সমাজ ভেঙে যাবে।” লি আরও যোগ করেন, “সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তাদের অনেককে চলে যেতে হবে।”
কার্টিস লি মনে করেন, U4U প্রোগ্রাম ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, এই প্রোগ্রামের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের তেমন কোনো আর্থিক খরচ হয় না।
বোয়েলেন্স এই প্রোগ্রামকে “শরণার্থীর জন্য সঠিক একটি পদ্ধতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীরা সবসময়ই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন।
মিরজোয়ান বলেন, “আমি সবসময় নার্ভাস থাকি।” অ্যাভেতিসিয়ান জানান, তিনি এবং তার স্বামী তাদের ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে কিয়েভ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
প্রথমে তারা বুলগেরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু পরে সেখানে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়লে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অ্যাভেতিসিয়ান বলেন, “এখানে সবাই খুব ভালো মানুষ। তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।”
সাশা জানান, তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তখন তাদের মেয়ে কথা বলতে শুরু করেছিল। তিনি সবসময় জানতে চাইত, “বাবা, আমাদের বাড়ি কোথায়?”
সাশা বলেন, কয়েক মাস আগে তার মেয়ে এই স্থানটিকে “আমাদের বাড়ি” বলতে শুরু করেছে।
এখন যদি তাদের আবার এখান থেকে যেতে হয়, তবে তাদের জীবন আবারও অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন